চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

গত ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেন বাংলাদেশের উন্নতি করতে পারেনি? তারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা মানুষের ভাগ্য বদলাতে চায়নি। নিজেরা ভোগ বিলাসে ব্যস্ত ছিল।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

এসময় পতেঙ্গা প্রান্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল আলম চৌধুরী নওফেল, চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিন মিং, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, আজকে চট্টগ্রামের সঙ্গে কথা বলছি, অনেক নেতা আমাদের মাঝে নাই। আমাদের প্রয়াত নেতারা মুক্তিযুদ্ধে বিরাট অবদার রেখেছেন। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, এক টাকাও রির্জাভ ছিল না। খাদ্য ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ তিন বার ভোট দিয়ে আমাদের ক্ষমতা এনেছিল বলে আমরা সার্বিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি।

সরকারপ্রধান বলেন, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলকে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন জাতির পিতা। সেই সময় জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা সে সময় পরিচয় দিতেই ভয় পেতেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটা টানেল হয়েছে দেখে এখনই উদ্বোধন করছি না। আমার ইচ্ছা ছিল দেখার যে, কেমন হলো। মনটা পড়ে রয়েছে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় টিউবের কাজও শেষ; সামান্য কাজ বাকি। বিরাট কাজ বলে মনে করি। টানেল নির্মাণে যারা জড়িত, সবাইকে ধন্যবাদ।

তিনি বলেন, বিরোধীরা সরকারের উন্নয়ন দেখতে পায় না, তাই তাদের চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে। আমরা অনেক ভালো আই ইন্সটিটিউট করে দিয়েছি। আমি বলব তাদের সেখানে চোখের ডাক্তার দেখাতে। তারা উন্নয়ন দেখতে পায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, আমাদের অপজিশন বোধহয় চোখ থাকতে অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। নিজেরা কিছু করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতেও পারবে না। হ্যাঁ, ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে। অর্থ চোরাচালান করতে পারবে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি করতে পারবে। অর্থ-অস্ত্র চোরাচালানি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ; এগুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। এটা হলো বাস্তবতা।

উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। কৃষি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, নতুন নতুন বীজ উদ্ভাবন করা হচ্ছে, উৎপাদন বাড়ছে। আমাদের যার যতটুকু জমি আছে কিছু না কিছু উৎপাদন করতে হবে। তাহলে আমরা অর্থনৈতিক মন্দার আঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারব।

তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি জাতি। আমরা বিশ্বের কাছে হাত পেতে, ভিক্ষা চেয়ে চলব কেন? বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব।

চট্টগ্রামে স্থাপিত টানেলের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর তলদেশ থেকে টানেল বিদেশে দেখেছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। চট্টগ্রাম এক সময় অবহেলিত ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক কাজ করেছি। টানেল স্থাপনের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদযাপন উপলক্ষে টানেল এলাকায় সকাল থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। আশপাশের অনেক এলাকা থেকে তারা অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে অবস্থান নেন। যদিও আমন্ত্রিতদের ছাড়া কাউকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। শুরুর আধঘণ্টা আগে থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা আসা শুরু করেন। দুই হাজার অতিথির উপস্থিতিতে বিপুল করতালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।