এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার :

আগামী ১৭ এপ্রিল শহরজুড়ে রাখাইন নববর্ষ পালনের বর্ণিল আয়োজন চলছে। ওইদিন ১৩৮৫ মগীসনকে বিদায় জানিয়ে সানন্দে বরণ করা হবে ১৩৮৬ মগীসনকে। বর্ষ বরণে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা প্রতিবছর সাংগ্রাই পোয়ে (জলকেলি উৎসব) ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালন করে থাকে। সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে সকলে পুরোনো বছরের গ্লানি মুছে শুরু করে নব উদ্যমে নতুর বছর।

১৩ এপ্রিল শনিবার শহরে বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জলকেলি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা । সকাল ৯টায় বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাখাইন শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন রাখাইন পল্লী পদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় অগ্গমেধাস্থ মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করেন নগদ টাকা, চাল, চিনি, দুধ, কলা, নারিকেল, মোমবাতি, সাবান দেশলাইসহ হরেক রকম পণ্য। গ্রহণ করেন পঞ্চশীল। এসময় ওই বৌদ্ধ বিহারের ধর্মীয় গুরু নানা নির্দেশনা প্রদান করেন।

রবিবার (১৪ এপ্রিল) এলাকা ও বিহার ভিত্তিক শোভযাত্রা বের করবেন। তারা পঞ্চশীল, অষ্টশীল ও বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করবেন।

১৫ ও ১৬ এপ্রিল রাখাইন পল্লীগুলোতে শিশুরা জলকেলিতে মেতে উঠবে। আর ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত জাকঝমকভাবে অনুষ্ঠিত হবে মূল সাংগ্রাইং পোয়ে বা জলকেলি উৎসব।

শহরছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ, সদর, হ্নীলা, চৌধুরী পাড়া, রামু, পানিরছড়া, চকরিয়ার মানিক পুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে সপ্তাহ জুড়ে নববর্ষ পালনে নানা অনুষ্ঠান পালিত হবে।

ইতোমধ্যে শহরের টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, চাউল বাজার, পূর্ব-পশ্চিম মাছ বাজার, আরডিএফ প্রাঙ্গন, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরো পাড়ায় তৈরি করা হচ্ছে জলকেলির ২০টি নান্দিক প্যান্ডেল।

রঙিন ফুল আর নানা কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্যান্ডেলের চারপাশ। সবার মাঝে এখন বর্ষ বরণের আমেজ। রাখাইন এলাকার প্রতিটি বাড়ি সাজছে নতুন সাজে। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও ব্যস্ত নতুন কাপড় কিনতে। অনেকেই শেষ করেছেন কেনাকাটার পালা। উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

রাখাইন তরুণ-তরুণীরা নতুন ও আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করে সেজেগুঁজে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং রাখাইন পল্লীতে তৈরি করা জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে একে অপরকে পানি নিক্ষেপ করে আনন্দ প্রকাশ করে।

এসময় বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানসহ চলে আনন্দঘন অনুষ্ঠান। সাথে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার তালে-তালে নেচে উঠেন রাখাইন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা।