সিবিএন ডেস্ক: কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত চারজন রোহিঙ্গাকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে যৌথভাবে ইউএনএইচসিআর ন্যানসেন রিফিউজি অ্যাওয়ার্ড এর আঞ্চলিক বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

এই গল্পকারদের একজনের জন্ম কুতুপালং ক্যাম্পে শরণার্থী হিসেবে, আর বাকি তিনজন ২০১৭ সালে নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের খোঁজে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাঁরা নিজ জনগোষ্ঠীর মানুষের দারুণ সব গল্প খুঁজে বের করেন, এবং স্মার্টফোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন।

শরণার্থী জীবনের একেবারে কাছ থেকে নেয়া এই মানবিক চিত্রের মাধ্যমে আবদুল্লাহ হাবিব, সাহাত জিয়া হিরো, সেলিম খান ও শাহিদা উইন রোহিঙ্গাদের চোখে রোহিঙ্গাদের জীবন দেখার এক সুযোগ এনে দেন বিশ্বের কাছে। সেলিম বলেন, “আমার লেন্সে আমি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শক্তি ও সাহসের চিত্র তুলে আনি সারা বিশ্বের কাছে”।

তাঁদের লক্ষ্য বাংলাদেশে থাকা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জীবনে পরিবর্তন আনা। জিয়া বলেন, “আমরা চাই না যে আমাদের কথা বিশ্ব ভুলে যাক। আমি চাই দুনিয়ার মানুষ যেন রোহিঙ্গাদের আর দশটা মানুষের মত ভাবে”। আবদুল্লাহ বলেন, “এই গল্পগুলোর মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গাদের আওয়াজ তুলে ধরার চেষ্টা করি। বিশ্বের সাথে একটি সেতুবন্ধনের চেষ্টা করি”।

এই চারজনের ছবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিন কিংবা প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে তাঁদের হাজার হাজার ফলোয়ার। নিজ জনগণের কন্ঠ তুলে ধরা ছাড়াও, তাঁরা বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেন। তাঁরা বাড়িয়েছেন রোহিঙ্গা গল্পকারদের সংখ্যা; যাঁরা মনের ভাব প্রকাশে চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র ও কবিতার শক্তি বুঝতে ও ব্যবহার করতে পারেন। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ক্যাম্পে নিয়মিত আঘাত হানা আগুন ও বন্যায় করণীয় কাজের তথ্যও তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারেন। শাহিদা বলেন, “আমার সমাজে রোহিঙ্গা নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আমি তাঁদের হয়ে কথা বলতে চাই, তাঁদের জীবন তুলে আনতে চাই আমার লেন্সে, আর আমার কবিতার মাধ্যমে তাঁদের আবেগগুলো জানাতে চাই”।

শরণার্থী, আভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ও রাষ্ট্রহীন মানুষদের সুরক্ষায় অসাধারণ অবদান রাখা ব্যক্তি,দল ও সংস্থাদের ১৯৫৪ সাল থেকে ইউএনএইচসিআর-এর ন্যানসেন পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬০-এরও বেশি ব্যক্তি, দল ও সংস্থা নিজ ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষদের জন্য অনন্য সেবা ও অতুলনীয় কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ এই পুরস্কার পেয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মানবিক প্রচেষ্টার কারণে আঞ্চলিক বিজয়ীদেরও এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।

গতকাল ১৩ ডিসেম্বর জেনেভাতে চলমান বৈশ্বিক শরণার্থী সম্মেলন গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে এক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার বিতরণ করা হয়। রোহিঙ্গা বিজয়ীরা সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পারায়, তাঁদের একটি ভিডিও বার্তা সেখানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দেখানো হয়। তাঁরা চারজন তাঁদের অনবদ্য সেবা ও সংকল্পের জন্য একটি সার্টিফিকেট পান। যদিও এতে কোন আর্থিক পুরস্কার নেই; তবে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাঁদের মানবিক কর্মকান্ডকে ভবিষ্যতে সহায়তা করা হবে।