নিজস্ব প্রতিবেদক;
কেউ অপহরণ করেনি, কেউ খুনও করেনি। মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হওয়া সাদিয়া সুলতানা মরিয়ম তার পরিচিত শিশু বান্ধবীদের সহায়তায় দীর্ঘ ১২ দিন আত্মগোপনে ছিল। শুধু তাই নয়—মাদ্রাসা কম্পাউন্ডের ভেতরেই একটি বাসার কক্ষ থেকে আজ (৭ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টায় ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার সদরের মহুরী পাড়াস্থ ওমাইর এতিমখানা থেকে গত ২৪ নভেম্বর হঠাৎ নিখোঁজ হয় ৫ম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া সুলতানা মরিয়ম (১৩)। সে কক্সবাজার শহরের পেশকার পাড়ার মরহুম নুর আহমদের মেয়ে।
২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এতিমখানা থেকে বের হয়ে আর ফিরে না আসায় সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন এতিমখানা কর্তৃপক্ষ ও পরিবারের সদস্যরা। পরদিন ২৫ নভেম্বর মেয়েটির মা রিনা আক্তার কক্সবাজার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (নম্বর-২০২৪)। এরপর মরিয়মকে নিয়ে গণমাধ্যমে অনুমানভিত্তিক ও বিভ্রান্তিকর সংবাদও প্রকাশিত হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নিখোঁজের আগে এতিমখানায় একটি ছোট চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর কয়েকজন মরিয়মকে সন্দেহ করে। এতে লজ্জিত হয়ে মরিয়ম মাদ্রাসা কম্পাউন্ডের একটি আবাসিক ফ্ল্যাটের দুই গৃহকর্মীর সহায়তায় গৃহকর্তা ও গৃহিণীর অজান্তে সেখানে আশ্রয় নেয়। তার থাকার জায়গা হয় ফ্ল্যাটের ফলস সিলিংয়ে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য—মরিয়মের থাকার-খাওয়ার দায়িত্ব নেয় তার সমবয়সী দুই গৃহকর্মী। দীর্ঘ ১২ দিন আত্মগোপনে থাকার পর আজ ভোরে গৃহিণী তার বেডরুমে মরিয়মকে দেখতে পেয়ে বিষয়টি জানান। এরপর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে মরিয়মকে উদ্ধার করে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই অজিত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং অধিকতর তদন্তের অংশ হিসেবে মরিয়ম ও তাকে আশ্রয়দানকারী দুই গৃহকর্মীকে থানায় নিয়ে যান।
এ বিষয়ে এসআই অজিত জানান, “এতিমখানার সহায়তায় মরিয়মকে উদ্ধার করেছি। দু’জন গৃহকর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা স্বীকার করেছে — এতিমখানায় চুরির ঘটনার পর সন্দেহ ও লজ্জা থেকে মরিয়ম সেখানে গিয়ে আত্মগোপন করেছিল।”
মেয়েটির মা রিনা আক্তার বলেন, “আমার মেয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এতিমখানার কারও কোনো দোষ নেই। মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। পুলিশ ও এতিমখানার সহায়তায় আপাতত মেয়েকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।”
ওমাইর এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা এহসান বলেন, “দীর্ঘ ১২ দিন আত্মগোপনে থাকা মরিয়মকে আজ ভোরে উদ্ধার করে পুলিশের সহযোগিতায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
