সিবিএন ডেস্ক:
বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। জুলাই মাসে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
রিপোর্টটি ২০২৫ সালের মে মাসে ঢাকায় ইউএসসিআইআরএফ-এর সফরের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। সফরে সংস্থার প্রতিনিধিরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। রিপোর্টটি লিখেছেন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক সীমা হাসান।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং আগস্টে সেনাবাহিনীর সমর্থনে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে নতুন সরকারের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ধর্মীয় সহনশীলতা ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও সরকার পতনের সময় সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু ঘটনা ঘটে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরও হামলার খবর পাওয়া যায়, যা মূলত প্রতিশোধমূলক ছিল বলে উল্লেখ করেছে ইউএসসিআইআরএফ। পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, ৫ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে ১,৭৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ২০টি ছিল সাম্প্রদায়িক হামলা। এ সময় অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী ও নাগরিক সংখ্যালঘু মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
সংবিধান সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কমিশনের প্রস্তাব নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দিয়ে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা ‘বহুত্ববাদ’ শব্দ ব্যবহারের সুপারিশ করেছে। বিএনপি এর বিরোধিতা করে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ শব্দবন্ধ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। ইসলামভিত্তিক জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আংশিক সমর্থন জানিয়েছে।
নারী সংস্কার কমিশনের ৪৩৩টি সুপারিশের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব ইসলামপন্থি সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বিরোধিতার মুখে পড়ে। নারীদের উদ্দেশ করে কটূক্তির অভিযোগে সংগঠনের কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারী ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করতে বাধ্য করে এবং নারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে হুমকি দেওয়ার পর কলেজ বদল করতে হয়।
রিপোর্টে বাংলাদেশে এখনো প্রচলিত ব্লাসফেমি ধারা (দণ্ডবিধি ১৯৫এ) এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনকেও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউএসসিআইআরএফ-এর মতে, এসব আইন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করছে।
সংস্থাটি বলেছে, সংবিধান সংস্কারে সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে বৈষম্য আরও গভীর হতে পারে। তাই বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা রক্ষায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সবার অংশগ্রহণমূলক সংস্কার প্রক্রিয়া জরুরি।
