নুরুল কবির,বান্দরবান:

বান্দরবান পৌর শহরের পথে পথে হুইল চেয়ারে করে ঘুরা ব্যক্তিটিকে দেখে প্রথমেই মনে হতে পারে কোন সাহায্য প্রার্থী অথবা ভিক্ষুক! কিন্তু তার পরিচয় জেনে যে-কেউ অবাক হবেন। এ কে এম সাইফ উদ্দীন নামে এই ব্যক্তি বাংলাদেশ পুলিশে চাকরী করেছেন (প্রা:ক-১২৮১) প্রায় ১১বছর।

ব্যায়াম করার সময় হাতের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারণ দেখিয়ে ২০১১ সনে চাকরী থেকে সেচ্ছায় অব্যাহতি পেতে আবেদেন করেছিলেন পুলিশ সদস্য সাইফ উদ্দীন । কতৃপক্ষ তাকে শারীরিক চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন ছুটিতে। কিন্তু দুর্ভাগা সাইফ উদ্দীনের আর ফেরা হয়নি চাকরী জীবনে। বেশ কয়েক বছর বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন শারীরিক ভাবে সুস্থ্য হলেও চলা ফেরার ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি। এই অবস্থায় চাকরী জীবনের পাওনা টুকু পেতে এখন হুইল চেয়ারে করে হন্যে হয়ে ঘুরছেন বান্দরবানের পথে পথে। অর্থ সংকটে কখনো ঈদগা মাঠ, কখনো মুক্ত মঞ্চের খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করছেন।

পুলিশ বাহিনীতে প্রশিক্ষণ কালীন সময়ে সাইফ উদ্দীন এর সহকর্মী ছিলেন বান্দরবানের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসহাক। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি। কথা হলে মো: ইছহাক এই প্রতিবেদককে জানান, ২০০০ সনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে থাকাবস্থায় সহকর্মী হিসেবে বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন সাইফ উদ্দীন। তিনি ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শাহপুর গ্রামের বাসিন্দা।

ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে ১নম্বর হওয়া সাইফ উদ্দীন নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি)তে প্রশিক্ষণ অর্জনের পর প্রথম চাকরী জীবন শুরু করেন সিলেট থেকে। পরবর্তী সুনামগঞ্জ এবং সর্বশেষ বান্দরবান জেলায় চাকরীরত অবস্থায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। আর এই অসুস্থ্যতার জন্য স্ত্রীর পরকিয়া প্রেমকে দায়ী করেন সাইফ উদ্দীন।

তার দাবী বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর ঔষুধের মাধ্যমে সাইফ উদ্দীনের শরীর দুর্বল করে তোলেছিলেন তার স্ত্রী এবং পরকিয়া প্রেমিকরা।

এদিকে পুলিশ বাহিনীতে কমরত অবস্থায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় বেতন বন্ধ হয়ে যায় সাইফ উদ্দীনের। অক্ষমতা নিয়ে স্বেচ্ছায় চাকুরী থেকে অবসরের আবেদন ও বেতন ভাতা পেতে বান্দরবান পুলিশের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোন সাড়া পাচ্ছেনা তিনি।

বর্তমানে তার স্ত্রী, দুই সন্তানও মা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পরিবার নিয়ে বাকী জীবনটুকু সুস্থভাবে কাটানোর জন্য উন্নত চিকিৎসা করাতে কতৃপক্ষের মানবিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।