সিবিএন ডেস্ক:
করোনা মহামারির মধ্যে গত দেড় বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালোই ছিল। সংকটের সময়েও প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন ঘটেছে। পরপর তিন মাস কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের পুরোটা সময়জুড়েই আগের বছরের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স কমে গেছে। এই ধারাবাহিকতা আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেও দেখা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ৪২ কোটি ডলার কম পাঠিয়েছেন। সদ্যবিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৭২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২১৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৫ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৫৪০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে (২ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) পাঠিয়েছিলেন ৬৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে ১৩০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম এবং আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত আগস্টে এসেছে ১৮১ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ডলার কম। ২০২০ সালের আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার।
অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন, গত দেড় বছরে অস্বাভাবিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ ছিল সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা। এছাড়া করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে যাবতীয় সঞ্চয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেও রেমিট্যান্স বেড়েছিল।

পরপর তিন মাস টানা প্রবাসী আয় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থায় আগের চেয়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স কম পাঠালেও দেশে আগের মতোই রেমিট্যান্স আসছে। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। তখন হুন্ডিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে উড়োজাহাজ চলতে শুরু হওয়ায় আবার হুন্ডি বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ‘হুন্ডি বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে। তবে দেশে ফেরা প্রবাসীদের অনেকেই বিদেশে যেতে পারেননি। এ কারণে প্রবাসী-আয় কমেছে।

এর আগে এক সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছিলেন- ‘রেমিট্যান্সের যে জাদু সেটি সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ মানুষ বিদেশে গেছে কম, এসেছে বেশি। সরকারি প্রণোদনার কারণে হুন্ডি ছেড়ে মানুষ ব্যাংকিং খাতে টাকা পাঠিয়েছিল। এ অবস্থায় জাদু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটিই বোঝার বিষয়।’

এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের সামান্য কিছু বেশি।