মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
বর্তমান অন্তবর্তী সরকার রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসনে খুবই আন্তরিক। এজন্য শুধুমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ড. খলিলুর রহমানকে সরকার মন্ত্রীর মর্যাদায় উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান অত্যন্ত মেধাবী, প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী ব্যক্তি। তিনি দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বেচ্চ গুরুত্ব সহকারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সোমবার (২ মার্চ) কক্সবাজার প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদের নেতৃবৃন্দ শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এর সাথে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারের অতিরিক্ত সচিব আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসনে আগের সরকারের সাথে মিয়ানমারের করা চুক্তিটি খুবই ত্রুটিপূর্ণ। এ চুক্তির আওতায় কোনভাবেই রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। বিগত সরকার রোহিঙ্গা শরনার্থীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু কোন রাজনৈতিক সরকার নয়, তাই বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের টেকসই ও কার্যকর প্রত্যাবাসনে কাজ করছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে শুধু উপদেষ্টা নিয়োগ নয় স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসও এ বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে ফলপ্রসূ আলাপ করছেন। প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরনার্থী বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স করার প্রস্তাব দিয়েছেন। যার কারণে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সমুহের প্রধান সহ আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ তৃণমূল পর্যায়ে এসে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে অবহিত হচ্ছেন। যা এ সরকারের রোহিঙ্গা বিষয়ক কুটনীতির অনন্য সফলতা। সর্বোচ্চ আন্তরিকতার বর্হিপ্রকাশ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। রোহিঙ্গারা চায় মিয়ানমারের আরাকানে তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে। একইভাবে বাংলাদেশ সরকার চায়, এদেশে সাময়িকভাবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে।
আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরো বলেন, আরাকান রাজ্য দখল করা আরাকান আর্মির সাথে বৈধভাবে সীমান্ত বাণিজ্য করার কোন সুযোগ নেই। আরাকান আর্মির নিজস্ব কোন মুদ্রা নেই। ফলে তাদের ডলারেরও কোন ব্যবস্থা নেই। এজন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের স্মার্গলিং যেকোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে। স্মার্লিং এর কারণে কতিপয় অসাধু কালোবাজারী লাভবান হলেও রাষ্ট্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঝুঁকিতে থাকছে সীমান্ত সহ পুরো এলাকা। এখন ডলারের পরিবর্তে মিয়ানমার থেকে মাদক, ভারত, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের গরু আসে। আর বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে মূল্যবান সামগ্রী আরাকানে পাচার হয়ে যায়।
আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের রোহিঙ্গা শরনার্থী সমস্যা সমাধানে আরো গবেষণা ও বাস্তবধর্মী সংবাদ পরিবেশন করার আহবান জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে। তাই যাচাই বাচাই না করে ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করলে বিশ্বের কাছে নেতিবাচক ম্যাসেজ যায়। দেশের বাইরে থেকে একটি মহল ভুল তথ্য দিয়ে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে রোহিঙ্গা সমস্যাকে আরো জটিল ও প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের দেশপ্রেম নিয়ে বাস্তবসম্মত সংবাদ পরিবেশন করার আহবান জানান আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সাক্ষাতকালে অন্যান্যের মধ্যে, অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার-১ মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন, অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার-২ আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুলল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার প্রেস ক্লাব প্রতিনিধি দলের মধ্যে সভাপতি মাহবুবর রহমান, সহ সভাপতি কামাল হোসেন আজাদ, সহ সাধারণ সম্পাদক ইকরাম চৌধুরী টিপু, অর্থ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হেলালী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাসানুর রশিদ, ক্রীড়া সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, শামশুল হক শারেক, মোর্শেদুর রহমান খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন শাকিল ও সদস্য বেদারুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
