চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে আগামী ১৫ অক্টোবর। আর ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন স্থাপিত রেললাইন এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত।

দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্বমানের অত্যাধুনিক এবং আইকনিক স্টেশন নির্মাণসহ চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ প্রায় ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানায়, প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে বিশ্বমানের সর্বাধুনিক রেলওয়ে স্টেশনের নির্মাণের পাশাপাশি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া, সংরক্ষিত বন এলাকায় রেললাইন স্থাপনে বন্য হাতিও বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।

এ বছরই ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা সরকারের। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হলেই পর্যটন নগরী কক্সবাজার রুটে ছুটবে ট্রেন।

ট্রায়াল রানের জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া স্টেশনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি ট্রেন। যেটিতে রয়েছে ৬টি বগি ও ২২০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন। কোরিয়া থেকে আনা এসব বগির একেকটিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। ১৫ অক্টোবর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেদিন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে ট্রেনটির ট্রায়াল রান হবে। বর্তমানে নগরের ষোলশহর থেকে দোহাজারি পর্যন্ত রেললাইনও পুরোদমে সংস্কার করা হচ্ছে। তিন থেকে চার মাস পর এ রুটে যাত্রী পরিবহণ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা। সামগ্রিক প্রকল্পের প্রায় কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে।

এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি। দুই পর্যায়ে এই প্রকল্প শেষ হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এ জন্য প্রকল্পের আওতায় বিশেষ কোচও কেনা হবে।

প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু হতে মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।

দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আশা করছি অক্টোবরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রান করা যাবে। আমরা সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল রান করলেও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনে যেতে আরও দুই-তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই এই রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করব।

প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যে-সব ট্রেন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য কক্সবাজার হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে। বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালু হতে কয়েক মাস সময় লাগবে।

আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আন্তঃনগর এসি চেয়ারের ভাড়া ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকার মতো, এখানে হয়ত ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

এদিকে শেষ হয়েছে ৯টি স্টেশন নির্মাণ কাজও। এর মধ্যে রয়েছে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ ও আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।