ঈদগাও সংবাদদাতা:

ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাতের পদত্যাগ দাবীতে বিক্ষেভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন স্কুলের শিক্ষক ছাত্ররা। গতকাল ( বৃহস্পতিবার) বিকালে স্কুল ক্যাম্পাস ও ঈদগাঁও বাজারের বিক্ষোভ করেন ছাত্র শিক্ষকরা।
এর আগে প্রধান শিক্ষকের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ করেন ছাত্ররা।
এরপর ছাত্র-শিক্ষকরা রাস্তায় বের হয়ে বিক্ষোভ করেন ও মিছিল সহকারে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান শিক্ষক বেগম খুরশিদুল জান্নাতের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে ইতোপূর্বে শিক্ষার্থীরা সরব হলে তাদের শায়েস্তা করতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন প্রধান শিক্ষক। বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করলে এর প্রতিবাদে ক্লাস ছেড়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে ও ঈদগাঁও বাজারের শাপলা চত্বরে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় স্কুলের শিক্ষকরাও ছাত্রদের সাথে যোগ দেন। সহকারী শিক্ষক আবদুল খালেক বক্তব্যে বলেন, বিগত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে এনে বসিয়ে রেখে স্কুল পরিচালনা করছেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলের ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত টাকা লুটপাট ও আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় মারধরের হুমকি দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
এতে ছাত্র শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।

অপর শিক্ষক আশিকুর রহমান বলেন স্কুলের কিচেন রুমে শতাধিক গাছের লাঠি মজুদ করেছেন প্রধান শিক্ষক। বহিরাগত সন্ত্রাসী ও লাঠির জোরে চেয়ার ধরে রাখতে চান তিনি।
এসময় ছাত্ররা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভূঁয়া ভূঁয়া বলে শ্লোগান দেন।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে হামলার শিকার ছাত্র ও শিক্ষকরা মিছিল সহকারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গিয়ে জানান, বিগত কয়েকদিনে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ছাত্রদের উপর দফায় দফায় হামলা ও মারধর করিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে সবসময় ১০/১৫ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী অবস্থান করে বলেও ইউএনওকে জানান ছাত্ররা ।

এদিকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সর্বত্র তুমুল নিন্দার ঝড় উঠেছে ।
আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়ার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষক আব্দুল খালেক।

অভিভাবক সরওয়ার কামাল বলেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমকে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানিয়ে বিগত দেড় দশক যাবৎ স্কুলে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন প্রধান শিক্ষক। সভাপতির রাজনৈতিক প্রভাব ও পেশী শক্তির জোর খাটিয়ে স্কুলের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

বাজারের ব্যবসায়ী আমির সোলতান বলেন, ঈদগাঁও বাজারের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্হিত স্কুল মার্কেটের দোকান ভাড়া দেয়ার সময় সালামী চুক্তির বাইরে দোকানপ্রতি ২/৩ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে, যার কোন রশিদ দেননি প্রধান শিক্ষক। অপরদিকে স্কুল মার্কেটের দোতলায় সদ্য নির্মিত ১০ টি দোকান ভাড়া দেয়ার কথা বলে সালামী বাবদ ৩০ লাখ টাকা আত্নসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক।
বিক্ষোভকারীরা আরও জানান, দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের যাবতীয় অপকর্মের সহযোগী সদ্য বিলুপ্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামীগ সভাপতি মাহমুদুল করিম মাদু। তিনি তার রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, পেশিশক্তি ও ভয়ভীতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের যাবতীয় দুর্নীতির অভিযোগ সামাল দিয়েছেন। খুরশীদুল জন্নাতের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের পুন:তদন্ত দাবী করেছেন তারা।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাত বলেন, দুপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম দিয়ে দফায় দফায় কয়েকটি গ্রুপ তার সাথে দেখা করতে আসে৷
এসময় বাইরে “গন্ডগোল” হয় বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ব্যাপারে জানেননা বলেও দাবী করেন প্রধান শিক্ষক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা জানান,কয়েকদিন ধরে ঈদগাঁহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কথা শুনেছি। তাদের স্বারকলিপিও পেয়েছি আগামী রোববার উভয়ের পক্ষের সাথে একটি বৈঠকও ডেকেছি। তবে বহিরাগত এনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা দুঃখজনক। অভিযোগ প্রমানিত হলে নিয়মমাফিক অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রয়োজনে অপসারণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও অভিভাবকদের।