সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
ঈদগাঁওতে মাদরাসার ছাত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা তাতে শেষ নয়, উল্টো মিথ্যা সংবাদ প্রচার ও নানাভাবে হয়রানি করেছে চিহ্নিত বখাটেচক্র।
ভিকটিম ছাত্রী ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ২ নং ওয়ার্ডের উত্তর পাহাশিয়াখালী এলাকার মোহাম্মদ আলমের মেয়ে।
ঘটনার প্রতিকার চেয়ে শনিবার (২৪ আগষ্ট) সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিস্তারিত তুলে ধরেন মা মনোয়ারা বেগম।
তিনি বলেন, বিগত ১৮ মে আমি ও আমার মেয়ে রাফিয়াসহ আমার পিতার বাড়িতে বেড়াতে যাই। হঠাৎ কোন প্রকার কথাবার্তা ছাড়া আমার ভাই আবুল কালাম প্রকাশ (বাবুল) আমার সম্পত্তির লোভে কাজী নিয়ে এসে তার ছেলে রিসাদ এর সাথে আমার মেয়ে রাফিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তাব করে। আমি রাজি না হওয়াতে আমাকে ও আমার মেয়ের গলায় ছুরি ধরে জোরপূর্বক কাবিন নামায় স্বাক্ষর ছিনিয়ে নেয়। ২ দিন পর আমি আমার মেয়েকে নিয়ে পিতার বাড়ীতে থেকে নিজ বাড়িতে চলে আসার পর আমাদের গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে উক্ত ঘটনার বিষয়ে অবগত করি। পরবর্তীতে ইসলামাবাদের কাজী অফিস থেকে তালাক নামা পাঠিয়ে দিই। এরপর থেকে আমার মেয়ে রাফিয়া স্বাভাবিকভাবে মাদ্রাসায় যাওয়া আসা করে।
অভিযোগকারী মনোয়ারা বেগম ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ২ নং ওয়ার্ডের উত্তর পাহাশিয়াখালী এলাকার মোহাম্মদ আলমের স্ত্রী।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে যেহেতু ২০২৪ সালের এইচএইসসি পরীক্ষার্থী সেহেতু ২৫ জুন পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে যাওয়ার পথে হঠাৎ করে রিসাদ, বাবুল, শাহানুসহ আরো অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে আমার মেয়েকে জোরপূর্বক গাড়ীতে তুলে নিয়ে যায়।
আমার মেয়ে বাড়ীতে না আসায় সম্ভাব্য জায়গায় খুঁজাখুজির পর জানতে পারি যে, আমার ভাইয়ের পরিবার জোরপূর্বক গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। আমরা যখন প্রশাসনের আশ্রয় নিতে যাই তখন আমার ভাই প্রস্তাব করেন যে, আমার মেয়ে তার বাসায় আছে এই কথা স্বীকার করে আরো বলে যে, সে নিজে অভিভাবক হয়ে আমার মেয়েকে উত্তর পাহাশিয়াখালী এলাকার মাহাবুব আলমের ছেলে আরমানুল ইসলামের সাথে বিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। একদিন পর ২৬ জুন ঈদগাঁও বাজারের কবিরাজ সিটি সেন্টারে সবাইকে সে ডেকে নিয়ে এসে মেয়ের অভিভাবক হিসেবে এবং গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ইসলামাবাদ ২নং ওয়ার্ডের স্থানীয় মেম্বারের উপস্থিতিতে একটি বিবাহের ফর্দ করে। কিন্তু ফর্দের অজুহাত দেখিয়ে বিবাহের নির্দিষ্ট তারিখ দিবে বলে আমার মেয়ে রাফিয়াকে আবারও নিয়ে যাওয়ার পথে আমি বাধা দিলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে আমার মেয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাই। তাঁরা আমার মেয়েকে বিভিন্ন স্থান পরিবর্তনের ফলে আমরা আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে দীর্ঘদিন প্রশাসনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এক পর্যায়ে ১৮ আগষ্ট ঈদগাঁও এর সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে এই বিষয়ে অবগত করি। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে উক্ত বিষয়ে অবগত করে শিক্ষার্থীরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে।
শিক্ষার্থীরা গোপন সূত্রে খবর পায় যে, রাফিয়াকে রিসাদের বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়। তাৎক্ষনিক শিক্ষার্থীরা রিসাদের বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে আমার মেয়ে রাফিয়ার মৌখিক জবানবন্দি নেয়।
জবানবন্দিতে আমার মেয়ে রাফিয়া বলেন যে, সে পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। আমার মেয়ের জবানবন্দির পর শিক্ষার্থীরা আমার মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় অবগত করে বাসায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে রিসাদের পরিবার কক্সবাজারের একটি স্থানীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেন যে, আমরা নাকি গুন্ডা নিয়ে তাদের বাড়ীতে হামলা করে আমার মেয়েকে নিয়ে আসি। এই ধরণের মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং রিসাদের পরিবার আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এই ধরণের ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলার দ্রুত প্রত্যাহার চাই।
তারা আমাদেরকে আরো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবে বলে বিভিন্নভাবে হুকমি ধমকি দিচ্ছে। এই বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা এমন অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর। জীবন ও সম্মানের নিরাপত্তা চেয়েছেন মাদরাসা ছাত্রীর পরিবার।
