আব্দুস সালাম, টেকনাফ:
টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের পরিত্যক্ত প্লাস্টিককে সবাই অবমূল্যায়ন করলেও এবার সেই প্লাস্টিককে মূল্যবান করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে সেখানে আর টাকার প্রয়োজন হবে না। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই সেন্টমার্টিনের অধিবাসীরা ব্যাগভর্তি বাজার বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের
যৌথ উদ্যোগে সোমবার (৩০ অক্টোবর)  ৩ মাসব্যাপী কার্যক্রমের উদ্ভোদন করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইয়ামিন হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো: জামাল উদ্দিন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন “প্লাস্টিক প্ল্যানেট ও  মানব দেহের জন্য কী পরিমান ভয়াবহ তা যদি মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হই তাহলেই এই আয়োজনের সার্থকতা। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন গত বছর এই আয়োজনের মাধ্যমে ২৩ ম্যাট্রিক টন প্লাস্টিক সেন্টমার্টিন থেকে মূল ভুখন্ডে স্থানান্তর করেছিল। এ বছর আশা করছি এর চেয়েও বেশি পরিমাণ প্লাস্টিক এখান থেকে সরানো যাবে। এই কারযক্রমে জেলা প্রশাসন একাত্মতা ঘোষণা করছে”
বিদ্যানন্দ থেকে বলা হয় “সেন্টমার্টিনের সামুদ্রিক শৈবাল ও রঙিন প্রবাল সমৃদ্ধ বিশাল সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য সবার নজর কাড়লেও প্রতিনিয়ত সমুদ্র ও দ্বীপের পরিবেশের অবনতি ঘটছে। যেখানে সেখানে এমনকি সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিক ফেলার কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ; হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন।
স্থানীয়দের ধারণা, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সরকারের। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা। এছাড়াও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেওয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্টমার্টিনে না থাকায় সেখানকার মানুষ প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের এই প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য একদল স্বেচ্ছাসেবী গ্রহণ করেছে একটি নতুন উদ্যোগ। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই উদ্যোগের আওতায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থাপন করা হয়েছে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’। যেখানে মানুষ তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকপণ্যের খালি পাত্র বা বোতল এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারেন চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এতে স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, ঠিক তেমনই কমবে পরিবেশ দূষণ। এই ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ প্রতি মাসে দুইবার করে চালু করা থাকছে। ফলে মানুষ তাদের জমানো প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিতে পারবেন নিয়মিত।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো: জামাল উদ্দিন বলেন: ” সংগৃহীত প্লাস্টিক দ্বীপ থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইকেল করা হয়। সংগৃহীত প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরী করা হবে “সচেতনতামূলক প্রদর্শনী”। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন জনসাধারণের কাছে” প্লাস্টিক দূষনের ভয়াবহতা” তুলে ধরবে।
উল্লেখ্য,গত বছর সেন্টমার্টিনে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২৩ মেট্রিকটন প্লাস্টিক ব্যর্জ রিস্লাইকিং করা হয়। দেশ বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা তখন জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করেন। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কতৃক জাতীয় মানবকল্যান পদক ও ২০২১ সালে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কতৃক “কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট” পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।