এম.এ আজিজ রাসেল:
আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ওইদিন সকালে সৈকতের ইনানী পাটোয়ারটেকে আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার সালাম গ্রহণ এবং নৌশক্তি প্রদর্শন সম্মেলনের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। বিকালে আন্তর্জাতিক শেখ কামাল স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিশাল জনসভায় ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা—কর্মীরা। তৃণমূল পর্যায়েও জোরেশোরে চলছে প্রচারণা। প্রচারণায় তুলে ধরা হচ্ছে সরকারের ১৪ বছরে কক্সবাজারে বাস্তবায়নাধীন সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত পর্যটন নগরী কক্সবাজার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বর্ণিল রূপে সেজেছে পর্যটন শহর। জনসভা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে নৌকার আদলে। সেজেছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামও। সর্বত্র সাজ সাজ রব। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে সবার মাঝে। শহরজুড়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো ব্যানার—ফেস্টুন ও বিলবোর্ড—পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন সড়ক, উপসড়ক। ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কার, ময়লা—আবর্জনা পরিষ্কার—পরিচ্ছন্ন, সড়কে লাইটিং ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজও চলছে সমানতালে। প্রধান সড়কের অসম্পূর্ণ কাজও দ্রুত শেষ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে শহরের কলাতলীর হাঙর ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত পাঁচ—ছয় কিলোমিটার সড়কে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিরাপদ করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শহর ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কলাতলী সৈকত সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ব্যানার—বিলবোর্ড টাঙিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার জেলা পরিষদ, হোটেল মালিক, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

জানা যায়, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। মহেশখালীতে হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর, তার পাশের মাতারবাড়ীতে সমাপ্তির পথে দেশের বৃহৎ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী অক্টোবর নাগাদ শেষ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণকাজ। টেকনাফ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, সোনাদিয়ায় পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, খুরুশকুলে পাঁচ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্ল্যাটবাড়ির বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী জনসভা সফল করতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায় থেকেও দলীয় প্রধানের জনসভায় লোকজনকে আসার সুযোগ করে দেওয়া হবে। সেন্ট মার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফ থেকেও লাখ লাখ মানুষ ছুটে আসতে চাইছেন। তবে সাগর চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এত লোকজনের জনসভায় আসা—যাওয়ার ব্যবস্থা করাও কঠিন। এত নৌযান জেলায় নেই। তিনি আরও বলেন, মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন, তার কথা শোনতে চান এবং তারা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে চান। তাই আগামীকাল ৭ই ডিসেম্বর কক্সবাজার মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম লক্ষ লক্ষ মানুষের পদচারনায় মুখরিত হবে। সারা কক্সবাজার শহর জনসভাস্থলে পরিণত হবে।

জনসভা থেকেও প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের উন্নয়নে নতুন কিছু ঘোষণা দিতে পারেন জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীকে তাদের প্রত্যাশার চাইতেও বেশি উন্নয়ন দিয়েছেন। কক্সবাজারকে অপরূপ সৌন্দর্যে্যর রাণী হিসেবে তিনি গড়তে চান। দেশী—বিদেশী পর্যটকরা যাতে কক্সবাজার এসে ভ্রমণ করতে পারেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেই কাজ করার জন্য তিনি কক্সবাজার পৌরসভা সহ বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কক্সবাজার নিয়ে তার সুদুরপ্রসারি স্বপ্ন রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কক্সবাজারকে খুব বেশি পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন কক্সবাজারবাসীকে। তাই এত উন্নয়নের পরেও কক্সবাজারবাসী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আরো কিছু প্রত্যাশা করেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তখন অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক আশ্রয়ের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে ছুটে আসেন তিনি। তখন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দলীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের উন্নয়নে যেসব প্রতিশ্রুতি (উন্নয়ন প্রকল্প) ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখন তার সব কটি দৃশ্যমান জানিয়ে ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারের এই মহা উন্নয়ন এবারের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।

সূত্র জানায়, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ উপলক্ষে পাটোয়ারটেক সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে সাগরের জলরাশির ওপর দীর্ঘ একটি সেতু ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। সেতুর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার সালাম গ্রহণ এবং নৌশক্তি প্রদর্শন সম্মেলনের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। মহড়ায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ ৪১টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত ৩৬টি দেশ অংশগ্রহণের কথা নিশ্চিত করেছে।