– শাহজাহান চৌধুরী

১৯৭৫ সালের ৬ই নভেম্বর, ৭.৩০ বিবিসি বাংলা অনুষ্ঠানের খবরের প্রায় অংশে বাংলাদেশের খবরটা শুনে কেন জানিনা খারাপ লাগলো, কারণ ভাষ্যকার বলছিলেন বন্দি সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের কি ঘটবে সেটা পদোন্নত জেনারেল খালেদ মোশাররফের সিদ্ধান্তের উপর।

জেনারেল খালেদ মোশাররফ একজন কৌশলী, দক্ষ মানুষ। বঙ্গ ভবনে নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সায়েমকে সহ খোন্দকার মোস্তাক সরকারের শান্তিপূর্ণ বিদায়সহ সব কিছু শেষ হওয়ার পর তিনি বক্তব্য রাখবেন। আমার বুঝবার বাকি ছিলনা আমার ফেভারিট মানুষ জেনারেল জিয়া এই বুঝি শেষ। ঢাকার কোন খবর সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না, সব প্রচার বন্ধ।

নব পদ উন্নতি জেনারেল নেওয়া খালেদ মোশারফ সেনা প্রধান নিযুক্তের গেজেট নিয়ে অফিসে যাওয়া সম্ভব হয় নাই। ইতি মধ্যে মধ্য রাত্রে সেনানিবাসে বন্দি সেনাপ্রধান জিয়াকে মুক্ত করেন সিপাহী জনতা । খবর পেয়ে জেঃ খালেদ মোশাররফ পালিয়ে যাওয়ার সময় ৭ই নভেম্বর ভোরে শেরে বাংলা নগর অবস্থানরত সেনাদলের একটি উত্তেজিত সৈনিক দলের হাতে নিহত হন।

জেনারেল জিয়া মুক্ত, সমগ্র ঢাকা সিপাহি জনতা একাকার হয়ে যায়। এবং বাংলাদেশ জিন্দাবাদ দিয়ে ঢাকা রাজপথে স্লোগান দিতে থাকেন। সেই ৭ই নভেম্বর আজ। সেই সিপাহী সেই জনতার অধিকাংশ আজ নাই, তবে রেখে যাওয়া বংশধরগণ আছে। আছে ঐতিহাসিক ঐক্যের চেতনা।

যাক জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি সায়েমকে সামনে নিয়ে দেশে আইন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন । জিয়া দেশ প্রেমিক, নির্লোভ , মানুষ তাহাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন । জিয়া দেশ ও জাতির জন্য ত্যাগ করতে মুহুর্ত ও দেরি করবেনা সেই ধারনা মানুষের ছিল বলে দেশের মানুষ তাহাকে আহব্বান করেন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে বাংলাদেশকে জনগণের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে।

মুক্তিযোদ্ধা ও বীর উত্তম খ্যাতিমান জেনারেল জিয়াউর রহমান একটি দল গঠনে মনোনিবেশ করেন। ইতিমধ্যে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ ইং কক্সবাজার মহকুমার উখিয়া থানা রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভ্যাসে আমাকে জিয়াউর রহমান সাহেবের জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলে সাথে জড়িয়ে যাই।

অনেকেই বলেন জিয়াউর রহমান লোভে ক্ষমতা দখল করেছিলেন । দেখুনতো তিনি পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে জাতির জন্য বিদ্রোহী হয়েছিলেন জীবনের ঝুকি নিয়ে কালুর ঘাট রেডিও স্টেশন দখলে নিয়ে দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বারে দেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে পক্ষে ঘোষণা দিলেন, এই কাজ না করলেও পারতেন। জাতি ছিল সেই দিন তাহার কাছে জীবনে চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

রাজনীতি ও প্রেসিডেন্ট পদ ও তাহার কাছে জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশে পরিণত থেকে রক্ষার যুদ্ধ ছিল। পদে বসে লোভ তাহার কাছে দেখি নাই।

বহু কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার তখন ছিল। তাই লিখতে হয় বিশ্বের অনেক জেনারেলদের দেশ শাসন দেখেছি। ক্ষমতা ত্যাগের পর পর তাদের নাম কিছু দিন যেতে না-যেতেই মুছে গেছে। মানুষের মনে নাই তদের কথা। এশিয়ার দেশে খেয়াল করলে দেখা যাবে।

কিন্ত জেনারেল জিয়া নিবেদিত , ত্যাগি, নির্লোভ, দেশ প্রেম পরীক্ষিত সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মানুষের জন্য গঠিত রাজনীতি, দর্শন, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়। জাতির সকল নাগরিকের। স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণের মহান নেতাকে বিনয়ের সাথে শ্রদ্ধা জানাই। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার ঘোষণার পর ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার ঐক্যই শহীদ জিয়ার স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনুপ্রেরণা যোগায়।

পরিশেষে, ৭ই নভেম্বরের চেতনায় উজ্জিবিত হয়ে নেতা কমীদের কে এক দফা আন্দোলনে আরো ত্যাগ স্বীকারের আহব্বান জানাচ্ছি। আন্দোলনে স্বৈরশাসকের পতন হউক, ম্যাডাম জিয়ার মুক্তি হউক, সকল রাজবন্দিদের মুক্তি হউক, নির্বাসিত জাতীয় নেতা সালাহউদ্দিন ভাই ফিরে আসুক , দক্ষ কৌশলী রাজনৈতিক করিগর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশ নায়ক তারেক রহমান দেশের কান্ডারী হউক। ৭ই নভেম্বরের চেতনা সফল হোক। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ।


লেখকঃ সাবেক হুইপ ও সভাপতি , বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল , কক্সবাজার জেলা শাখা।