অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন :

শব্দ দূষণ নিয়ে বাংলাদেশের জনসাধারনের মধ্যে কোনরুপ নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। ফলে এই দূষণ কস্টকে তারা নিজেরাই নিজের অজান্তে মেনে চলেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের বড় শহরে, যেখানে অনেক গুলো বসত বাড়ী রয়েছে, এখানে এর উৎপাত বেড়ে চলেছে। ঘনবসতিপুর্ণ এলাকায় পাশাপাশি অনেকগুলো মানুষের বসবাস একথাটি উৎসব করতে গিয়ে আনন্দবাজরা বেমালুম ভুলে যান।এখন পেশী শক্তির ব্যবহার বাংলাদেশে একটি নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার।এই আনন্দ উৎসব করতে গিয়ে আনন্দবাজরা শব্দদূষণের ব্যাপারটি বেমালুম ভুলে যান। ২৩/১/২০১৮ তারিখে একটি জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে এই শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে অনুরোধ করতে গিয়ে আনন্দবাজদের আক্রমনে এক প্রবীণ এর মৃত্যু হয়। অভিযোগকারীকে উল্টো প্রাণ দিতে হলো এই আনন্দবাজদের হাতে। বর্তমানে বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামো এমন যে , কিছু লোক অন্যদের উপর জোর জুলুম করার প্রবল ক্ষমতা পেয়েছেন। বাংলাদেশে বিয়ে ,জন্মদিন সহ নানা অনুষ্টানের আয়োজন বেড়েছে। সাথে অবৈধ অর্থ কামানোর বিষয়টিও এখানে এসে যায়। আর এই অবৈধ টাকা মানুষকে বিকৃত রুচীর দিকে টেনে নিয়ে যায়।

রাজনৈতিক দলের অনুষ্টান উপলক্ষে শব্দদূষণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসুচীতে গুরুত্বপুর্ণ রাজনেতিক ব্যক্তির ভাষনণ অনবরত বাজতে থাকে।এর ফাঁকে ফাঁকে গান কোরআন তেলাওয়াত শোনানো হয়। রাস্তার দুপাশে এক কিলোমিটার দু কিলোমিটার শব্দযন্ত্র বসিয়ে এসব উৎকট শব্দে চলমান যানবাহন ও মানুষকে শোনানো হয়। কিন্তু মানুষ অনেক সময় কোলাহল মুক্ত পরিবেশ চায়। কিন্তু রাজনৈতিক দলের কর্মসুচী সেটা মানতে চায়না। মানুষকে কস্ট দিয়ে কোন রাজনীতি সফলতা লাভ করতে পারেনা।এবিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের ভাববার সময় এসেছে।

দেশের মন্দির, মসজিদ, গির্জাগুলোও এব্যাপারে সহনশীল নয়। বড় মাঠে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হলেও রাস্তায় এক দু কিলোমিটার শব্দ যন্ত্র লাগিয়ে মানুষকে বধির করার চেস্টা করা হয়। রাত যত গভীর হয় তকরীরকারীদের উচ্চস্বর সেটা যত ভালো কথা হোকনা কেন অনেকের জন্য কস্ট উৎপাদন করে। আমরা আল্লাহর রাসুল (সা:) র জন্মস্থান মক্কায় , এমনকি মদিনায়ও এরকম কোন চিৎকার করে তকরীর করতে শুনিনি। আমার পরামর্শ হলো এই ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্বপূর্ণ কথা জনগনকে আরো ভালোভাবে শুনানো যায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। মানুষ তখন তা প্রতিটি ঘরে ঘরে , হোটেলে , গাড়ীতে শুনতে পাবে, দেখতে পাবে। আমি সম্মানিত মুফতী, শায়খদের , আলেমদের ফতোয়া এবিষয়ে প্রত্যাশা করবো।নাগরিক জীবনে যারা উন্নত তাদের দেশে এ নিয়ে অনেক আইন কানুন রয়েছে। সম্ভবত আমাদের দেশেও পাবলিক নুইসেন্স নামে আইন আছে। শব্দদূষণ নিয়ে বাংলাদেশের লোকজনের মধ্যে কোনরুপ সচেতনতা তৈরী হয়নি। সরকার এ বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিলেও কোন কাজ হয়নি। যেমন শব্দের একক হল “ডেসিবল” । মানুষ সাধারণত কথা বলে ৬০ ডেসিবেলে। এর উপরের ডেসিবেল মানুষের জন্য ক্ষতিকর।এই মাত্রা নিরুপনের অনেক যন্ত্র আমাদের দেশে আছে। উল্লেখ্য পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পুজোর সময় শব্দের মাত্রা নিয়মের বাইরে অতিক্রম করতে দেওয়া হয়না। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার সময় আইনশৃংখলায় এরা অনেক সচেতন। আবাসিক এলাকাকে শব্দদূষণ মুক্ত রাখতে তাদের ব্যাপক আয়োজন লক্ষ্য করা যায়। সচরাচর মানুষ ৬০ ডেসিবেলে কথা বলে। মানুষ ২০ ডেসিবেলে আওয়াজ শুনতে পায় না। সাধারনত একটি বুলডোজারের শব্দ ৮৫ ডেসিবেল।আমাদের অনেক এলাকা রয়েছে প্রতিদিন সেখানে বুলডোজারের আওয়াজই তৈরী হয়। ্এই বিবেচনায় আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে যাচ্ছি। আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হলে ১৪০ থেকে ১৯০ ডেসিবেল শব্দ উৎপন্ন করে। বজ্রপাত হলে ১২০ ডেসিবেল শব্দ উৎপন্ন করে। গান শোনার ক্ষেতে ১০০ ডেসিবেল শব্দ উৎপন্ন হয়।১০০ ডেসিবেল মাত্রায় যদি ১৫ মিনিট গান শোনা হয়, তাহলে শ্রবনযন্ত্রের অবশ্যই ক্ষতি হবার সমুহ সম্ভাবনা থাকে। এই ডিজিটাল শব্দ শোনাতে আমাদের দেশের কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার কোন হিসাব আমাদের দেশে নাই।আমাদের দেশে হাইড্রোলিক হর্নকে বিবেচনায় এনে আইন করা হয়েছে। আদালতের রায়ও রয়েছে।এই প্রচেস্টায় আমরা কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি,তা ভেবে দেখতে হবে।সম্প্রতি কক্রাবাজারের মহেশখালীতে প্রশাসন শব্দযন্ত্র ব্যাবহারের উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ করেছে বলে আমরা শুনেছি। এবিষয়ে আবার ব্যাপক প্রতিক্রিয়াও দেখেছি।এক পক্ষ বলছে এখন মাহফিলের মওসুম তাই এটা বন্ধ করার জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবার আরেক পক্ষ বলছে কোন মানুষের মৃত্যু সংবাদ আমরা কিভাবে দেবো। ইত্যাদি । এসব বিষয়ে যথেস্ট সদুত্তর বোধহয় সরকারের রয়েছে।

অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন

আমাদের দেশে আবাসিক এলাকা বলতে কিছু নেই। ব্যবসা , শিল্পএলাকা প্রায় সব একাকার হয়ে গেছে। বাংলাদেশে শান্তিপুর্ণ বসবাসের জায়গা প্রায় খুব কমই রয়েছে। এর পাশাপাশি কোন কোন আবাসিক এলাকাকে হোটেল মোটের জোন বানিয়ে , বিভিন্ন অল্পবয়সের স্টার শিল্পীকে হংকং, পাট্টায়ার মত পণ্য বানিয়ে রুম প্রোগ্রাম ,স্টেইজ প্রোগ্রাম ,বিভিন্ন নৃগোষ্ঠির অনুষ্টান বলে আনন্দবাজদের সীমাহীন উৎপাত তো আছেই। ভেবে দেখতে হবে ইসলাম আমাদের ধর্ম । আমরা জাতে বাঙ্গালী ।