মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:

বান্দরবানের লামা উপজেলায় চলতি মৌসুমে হরেক রকম সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাডের চূড়া, ঢালু ও সমতলে সবজির চাষ করা হয়। তবে বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন হলেও স্থানীয় বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। উৎপাদিত সবজি স্থানীয়ভাবে বাজারজাত না করে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন আড়তদারের মাধ্যমে বাজারজাত করায় স্থানীয় বাজারে এর কোন প্রভাব পড়ছেনা বলে জানিয়েছেন, স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ীরা। এতদাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া এসকল সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি মৌসুমে এসকল সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। দুই শতাধিক কৃষক উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। চাষীদেরকে সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করলে একদিকে স্থানীয় ভোক্তারা কম মূল্যে সবজি ক্রয় করতে পারবে। অপরদিকে সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে শত শত পরিবার স্বাবলম্বি হতে পারবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লামা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার এলাকার পাহাড় ও সমতলে উপজেলার ও পাশের চকরিয়া উপজেলার দুই শতাধিক কৃষক হরেক রকমের সবজির আবাদ করেছেন। উৎপাদিত সবজির মধ্যে রয়েছে করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, পেঁপে, কচু, কাকরোল, লাউ, কুমড়া, বরবটি, ঢেড়শ, শসাসহ হরেক রকমের সবজি। বর্ষার আগেই কৃষকরা পাহাড়কে সবজি চাষের জন্য প্রস্তুত করে বীজ বপন শুরু করেন। বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে সবজি তোলার সময় হয়ে ওঠে। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা হিমছড়ি পাড়া, বদুরঝিরিসহ বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, পাহাড়ের চূড়া, ঢালু, সমতলে কৃষকেরা বাঁশের তৈরি মাচাং ও নাইলনের নেটের তৈরী মাচাং দিয়ে এসকল সবজির চাষ কর। মাচাংয়ের নিচে থোকায় –থোকায় করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাকরোল, লাউ, কুমড়া, বরবটি, শসাসহ হরেক রকমের সবজি ঝুলছে। এখন কৃষকরা উৎপাদিত সবজি বাজারজাতকরণের জন্য উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছে। আবার উত্তোলিত সবজি পরিবহনের সুবিধার জন্য সড়কের পাশে মওজুদ করে রাখেন। মোট কথা উপজেলার বিভিন্ন সড়কগুলোর দু পাশে বসে মিনি সবজির হাট।

কি পরিমাণ জমিতে চলতি মৌসুমের সবজির চাষ হয়েছে, তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান কৃষি বিভাগের নিকট না থাকলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র লামা উপজেলার রুপসী পাড়া ইউনিয়ন এবং ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা এলাকায় থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি মিনি ট্রাক যোগে বিভিন্ন ধরনের সবজি চকরিয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে কৃষক এবং বেপারীরা। এছাড়া উপজেলার সরই, আজিজনগর, ফাইতং, গজালিয়া এবং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় সম পরিমাণ সবজি স্থানীয় কৃষক এবং বহিরাগত ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা অভিযোগের সুরে জানান, লামায় বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন হলেও কাচাঁ তরি–তরকারির বাজারে এর কোন প্রভাব পড়ছেনা। তাদেরকে তরিতরকারির ভরা মৌসুমেও চড়া মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে। কৃষকেরা স্থানীয়ভাবে বাজারজাত না করে উপজেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে উৎপাদিত সবজি। যার কারণে বাজারের ব্যবসায়ীদের চকরিয়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তরিতরকারী ক্রয় করে এনে লামা বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে।

লামা পৌরসভার টি. টি এন্ড ডিসি এলাকার নুর মোহাম্মদ, ইব্রাহীম, ইয়াংছা এলাকার মো. রফিক, ফেরদৌস জানান, চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমান সবজি উৎপাদন হলেও স্থানীয় হাট বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। সবজির এ ভরা মৌসুমে বাজার থেকে চড়া দামে তরিতরকারি ক্রয় করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে লামা কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ মিরাজ উদ্দিন, কাশেম ও শাহাদাত হোসেন বলেন, সবজি উৎপাদনকারী কৃষকদের বেশির ভাগই পার্শ্ববর্তী চকরিয়ার আড়তদারদের থেকে দাদন নিয়ে চাষাবাদ করে থাকে। যার কারণে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি আড়তেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়তদার আবুল কালাম জানান, এ বছর চিচিংঙ্গাসহ অন্যান্য সবজির চাহিদা বেশি রয়েছে। লামার পাহাড়ে উৎপাদিত সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় চাহিদা বেশী। প্রতি সপ্তাহ তিন দিন শুক্রবার, শনিবার ও মঙ্গলবার লামার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সবজি কিনতে যান। তিনি আরো জানান, উৎপাদিত চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। রুপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লাপাড়ার কৃষক মো. বক্কর আলী ও আবদুল মজিদ জানান, তাদের এলাকায় স্থানীয় এবং বহিরাগত চকরিয়া ও কাকারা এলাকর কৃষকেরা হরেক রকম সবজি উৎপাদন করেন। তারা চিচিঙ্গা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। প্রতি একর জমিতে চিচিঙ্গা চাষ করতে খরচ পড়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। যা থেকে তারা বাজারদর অনুযায়ী বিক্রি করে ২ থেকে লক্ষ টাকা অনায়াশে আয় করবেন ।

পাহাড়ে হরেক রকমের সবজির বাম্পার ফলনের সত্যতা স্বীকার করে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নুরে আলম বলেন, পাহাড়ি ভূমিতে বর্ষাকালে বিনা সেচে সব ধরনের ফসল উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিশেষ করে প্রান্তিক চাষীগণ সবজি চাষে ঝুঁকেছেন। বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে তারা লাভবানও হচ্ছেন। চাষীদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।