ইমাম খাইর, সিবিএন:

বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাববোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ.কে.এম সায়েফ উল্যা বলেছেন, সরকার মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে অনেক কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা শিক্ষার সোনালী যুগ ফিরে আসছে। তিনি শিক্ষকদের প্রতি মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার আহবান জানান।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘মানবতার সেবায় মাদরাসা শিক্ষকদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রফেসর এ.কে.এম সায়েফ উল্যা প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামী শীতকালীন অধিবেশনে শিক্ষা আইন পাশ হবে। এর আগেই যার যার সমস্যা সমাধান করে নিতে হবে। এবতেদায়ী মাদরাসার সমস্যা গুলো সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের পাশাপাশি শিক্ষা বোর্ডের ও ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। একযোগে ৬৪ জেলার কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বোর্ডে এসে কোন শিক্ষক হয়রানীর নজির এখন পাওয়া যাবেনা। সব ধরণের অনিয়ম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারর্ছীন কক্সবাজার জেলা শাখা সভার আয়োজনে এই মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বগত জানিয়ে প্রফেসর এ.কে.এম সায়েফ উল্যা বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের সময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য আলেম ওলামাদের ধন্যবাদ জানান।

জেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা কামাল হোছাইনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারর্ছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আসা মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে চিকিৎসা ও স্যানিটেশন বিষয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়ে তিনি বলেন সম্বনিত ভাবে ত্রাণ বিতরণ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরী।

তিনি জমিয়াতুল মোদারর্ছীনের সকল সদস্যদেরকে আরাকান থেকে হিজরত করে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের কাছে সত্যিকারের আনছারের ভূমিকা নিয়ে কাজ করার আহবান জানান।

শাব্বির আহমদ মোমতাজী বলেন, মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ক্যাম্পগুলোর আজ করুন অবস্থা। স্বচক্ষে না দেখে তা বোঝা যাবেনা। সাধ্য মতো রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানো দরকার। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী বলেন, রোহিঙ্গাদের দুঃখ দুর্দশার কথা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরুন। নিজেদের বেতনের একটা অংশ তাদের জন্য ব্যয় করুন।

এ সময় তিনি স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা পল্লীতে মেডিকেল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা করতে জমিয়তের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা নেতাদের নির্দেশ দেন।

প্রিন্সিপ্যাল মোমতাজী বলেন, ইসলাম মানবতার কল্যাণে যে উদারতার কথা বলেছে তার আলেকে জমিয়ায়াত শুধু মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তা নয়, যে কোন দুর্যোগকালিন সময়ে মানবিক বিবেচনায় দূর্গত মানুষের পাশে দাড়িঁয়েছে। জমিয়াতের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান বিভিন্ন দূযোর্গে নিজেই ত্রাণ নিয়ে দূর্গত মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছেন। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, সিডর ও আইলার পরবর্তী দূর্ঘত মানুষের পাশে দাড়িঁছেন জমিয়াতুল মোদারের্ছীনে সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দিন। সাম্প্রতিক উত্তর বঙ্গের বনায়ও জামাল পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জমিয়াতের রিলিফটিমসহ তিনি নিজেও ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের আরাকানে সরকারী বাহিনীর চলমান নিষ্ঠুর নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষ বাংলাদেশে হিজরত করেছেন। তারা আজ বনে জঙ্গলের ঝুপড়ি গুলোতে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই বিপন্ন রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের জন্য জমিয়াতের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউিদ্দিন নিজের পরিবার থেকে এক লাখ টাকার অনুদান দিয়ে তাদের পাশে দাড়িঁয়েছেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরদী ও সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা শাব্বির আহমদ মোমতাজী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এগিয়ে যান গোটা মুসলিম বিশ্ব এবং অন্তর্জাতিক বিশ্ব আপনার সাথে আজ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধনে ঐক্যবদ্ধ। বিশ্ব বাসিকে নিয়ে মিয়ানমারের উপর কঠোর চাপ প্রয়োগ করুন। তারা যেন রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্বসম্মানে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহাদত হোসাইনের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ সেলিম উদ্দিন।

সভায় কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নুরী, কক্সবাজার হশেমিয়া কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, কক্সবাজার আদর্শ মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী ও সদর উপজেলা সভাপতি মাওলানা মনছর আলম আযাদসহ বিভিন্ন মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল, সুপার ও প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

সভা শেষে অধ্যক্ষ মাওলানা কামাল হোছাইন সভাপতি, অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নুরী সহ-সভাপতি ও মাওলানা শাহাদত হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কক্সবাজার জেলা শাখার কমিটি পূনর্গঠন করা হয়। কমিটি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ.কে.এম সায়েফ উল্যা। নতুন কমিটি মেনে নিয়ে সবাইকে একযোগে মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করার আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশের আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য গত কয়েকদিন ধরে জমিয়াতের মহাসচিব মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জমিয়াতের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে কক্সবাজারে অবস্থান করেন। উখিয়া ওটেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে নগদ টাকাও ত্রান সামগ্রী বিতরণ করেন ওই টিম।