আবদুর রহিম সেলিম, উখিয়া:

উখিয়ার পাশ্ববর্তী সীমান্ত উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্র, বাইশারী এলাকায় একটি ১০/১২ জনের সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের গরু লুট, স্বর্ণালংকার, নারীদের ইজ্জ্বত লুন্ঠনসহ নানা অপরাধ সংঘঠিত করে আসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিনের পর দিন এসব অপরাধীরা নানা অপরাধ করার পর বিনা বাঁধায় পার পেয়ে যাচ্ছে। আইন শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগে এসব অপরাধীরা সীমান্তে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে। স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অরিন্দ্র বড়–য়ার ছেলে রতন বড়–য়ার নেতৃত্বে চলছে রোহিঙ্গাদের গরু ছিনতাই ও লুটপাটের মহোৎসব। কথিত রতন বড়–য়ার নেতৃত্বে যদু বড়ুয়া, মদু বড়–য়া ও গুরা মনিয়াসহ তার সিন্ডিকেটে সক্রিয় রয়েছে প্রায় হাফ ডজন গরু ছিনতাইকারী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রতন বড়–য়া গাড়ী চালার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের চোরাই পথে ইয়াবা পাচার করে আসছে। শুধু তাই নয়, গত কিছুদিন আগে টেকনাফের হ্নীলা থেকে ৭০ হাজার ইয়াবার একটি চালান বহন করে আসার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এসময় ড্রাইভার রতন বড়–য়া, মধু ও যদু বড়–য়া কৌশলে পালিয়ে যায়। পুলিশের ধরপাকড় এড়াতে রতন বড়–য়া কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম বিরোধী সহিংসতা শুরু হলে রতন বড়–য়া বাড়িতে ফিরে আসে। শুরু করে সীমান্তের তুমব্রু ও বাইশারী দিয়ে রোহিঙ্গাদের গরু ছিনতাই ও লুটপাট। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯ টার দিকে মিয়ানমারের ৪ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বৌদ্ধ পল্লীতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ২০টি গরু নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ঘুমধুমের উত্তর ঘুমধুম বড়–য়া পাড়ার মেকো বড়–য়ার বাড়িতে মজুদ করে। এলাকাবাসী সংবাদটি পুলিশকে জানালে ওই দিন রাতেই মেকো বড়–য়ার বাড়ি থেকে গরু গুলো অন্যত্রে সরিয়ে নেয়। এছাড়াও গত ৭ সেপ্টেম্বর রতন বড়–য়া, মধু ও যদু বড়–য়ার নেতৃত্বে টিভি রিলে কেন্দ্রের পূর্ব পার্শ্বে দেশের শীর্ষ বহুজাতিক কোম্পানী আকিজ গ্রুফের কুমির চাষের নিয়োজিত কর্মচারীদের ভবনে গরু ও ইয়াবা ছিনতাই করে মজুদ করে রাখার খবর পেয়ে এলাকাবাসী প্রতিরোধ করতে এলে তাদেরকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ধাওয়া করে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ভূক্তভোগীরা ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ রহস্যজনক কারণে এখনো অপরাধী রতন বড়–য়াসহ মধু ও যদু বড়–য়াকে আটক করেনি। ফলে দিনের পর দিন সীমান্তের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে।

ঘুমধুমের স্থানীয় আব্দু শুক্কুর বলেন, গরু ছিনতাই ও লুটপাট করে আসার ফলে পাহাড়ী জনপদের শানত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেছে সন্ত্রাসী রতন বাহিনী। পাহাড়ী সীমান্ত জনপদের কথিত সন্ত্রাসী রতন বড়–য়া ও তার সহযোগী মধু ও যদু বড়–য়াসহ হাফ ডজন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে নানা প্রকার বেআইনী কার্যকলাপ ও চাঞ্চল্যকর অজানা তথ্য কাহিনী। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের লোক পরিচয় দিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে দ্বিধাবোধ করেনি রতন বাহিনী। বেতবুনিয়া এলাকার রশিদ আহমদ বলেন, গত ১০ দিনে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুবাদে রতন বাহিনী বেপরোয়া হয়ে শত শত গরু লুট, রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে স্বর্ণালংকার ছিনতাই ও রোহিঙ্গা যুবতীদের ধর্ষণের মত ঘটনা সংঘটিত করে আসছে। এ ছাড়াও সীমান্তের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে রতন বাহিনীর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার যেসব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সেসব তথ্য নাসাকা বাহিনীর নিকট পাচার করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে রতনসহ মধু ও যদু বড়–য়ার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ঘুমধুম ৬ নং ওয়ার্ডের নিরীহ জনসাধারণ রতন বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহার, গরু ছিনতাই ও রোহিঙ্গাদের স্বর্ণালংকার লুটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। জনগণ আশা করেন সরকার এসব সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় না দিয়ে এই দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এতে করে পাহাড়ী জনপদে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এলাকার শান্তি শৃংখলা ফিরে আসবে এবং অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গারা নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবে। এটাই সবার প্রত্যাশা। ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বলে তিনি জানান। ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি ইমন চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান রতন বড়–য়াসহ মধু ও যদু বড়–য়াকে পুলিশ যথা সময়ে গ্রেপ্তার করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।