অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ রেজাউল করিম:
সমাজের উন্নয়ন শুধুমাত্র অবকাঠামো বা প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে সীমাবদ্ধ নয়—বরং এর প্রকৃত প্রগতির পরিমাপ হয় সেই সমাজ কতটা সহনশীল, উদার এবং অনুপ্রেরণামূলক, তা দিয়ে। একটি সভ্য, মানবিক সমাজ কখনোই সেইসব মানুষদের পথ রোধ করে না যারা সাহস করে কিছু ভিন্ন, কিছু ভালো, কিছু নতুন করার চেষ্টা করে। বরং প্রকৃত সমাজ তাদের হাত ধরে, পাশে দাঁড়ায় এবং সম্মান জানায়।

প্রতিদিন হাজারো মানুষ জন্ম নেয় স্বপ্ন নিয়ে, সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু তারা হয়তো থমকে দাঁড়ায় সমাজের চোখ রাঙানিতে, পরিবার বা পাড়ার তাচ্ছিল্যে, বা ভয়ের দেয়ালে। যারা সাহস করে এগিয়ে যেতে চায়—তাদের যদি সমাজই নিরুৎসাহিত করে, তবে সেই সমাজের আত্মা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।

আমরা যদি চাই একটি আলোয় ভরা, সহানুভূতিশীল ভবিষ্যৎ গড়তে, তবে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার সংজ্ঞা নতুন করে রচনা করতে হবে। সমাজের দায়িত্ব শুধুমাত্র আইন বা নীতি তৈরি করা নয়—বরং সেই পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে একজন মানুষ তার মেধা, মনন ও সাহসকে নির্ভয়ে বিকশিত করতে পারে।

‍সম্মান এবং উৎসাহ হোক সামাজিক সংস্কৃতির অংশ

সাহসীরা ভুল করতে পারে। তারা বিপথেও যেতে পারে। কিন্তু যে সমাজ ভুলের ভয় দেখিয়ে স্বপ্ন দেখাকে নিরুৎসাহিত করে, সেই সমাজ কখনোই শ্রেষ্ঠত্বে পৌঁছাতে পারে না। ‍ভবিষ্যৎ গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো—একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা যেখানে উৎসাহ, সহযোগিতা এবং সম্মান থাকবে একে অপরের প্রতি।

আমরা অনেক সময় নিজেদের অতীত নিয়ে গর্ব করি। কিন্তু অতীতের প্রতি আনুগত্য যদি ভবিষ্যতের প্রতি দায়িত্ববোধকে ধ্বংস করে দেয়, তবে তা আত্মঘাতী। আজকের শিশু, যুবক বা নবীন চিন্তাবিদদের যদি আমরা ‍উদ্দেশ্যহীন কুঠুরিতে আটকে রাখি, তবে ভবিষ্যতের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।

‍ভবিষ্যতের প্রতি দায়বদ্ধতা: সময়ের দাবি

আমাদের সামনে যে পথ, তা শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের দেখানো পথে হাঁটার অনুশাসন নয়। বরং আমাদের বেছে নিতে হবে একটি সজাগ, সক্রিয় এবং দয়ালু ভবিষ্যৎ। যেখানে আমরা নিত্যদিন প্রশ্ন করবো—”আমি কীভাবে অন্যকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারি?”

সমাজ গঠনের এই নৈতিক প্রশ্নের উত্তর আমাদের দায়িত্ববোধ থেকেই আসতে হবে। আমাদের শিক্ষা, আমাদের ধর্ম, আমাদের মূল্যবোধ—সবকিছুর কেন্দ্রে যদি মানুষকে এগিয়ে দেওয়ার মনোভাব থাকে, তাহলেই এই পৃথিবী হবে বাসযোগ্য, সহানুভূতিশীল ও সৌন্দর্যময়।

একটি সমাজ তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয় তখনই, যখন সে তার সাহসীদের জন্য দ্বার খুলে দেয়, তাদের হাত ধরে বলে—”তুমি পারবে, আমরাও আছি তোমার সঙ্গে।” এই সংহত চেতনা, এই সম্মিলিত সহানুভূতি—এই হোক আমাদের সামাজিক অঙ্গীকার।

অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ রেজাউল করিম
সাবেক অধ্যক্ষ
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ।