সেলিম সিরাজী:
অনেকেই জানতে চাই বিএনপি’র আদর্শ কি? যদিও অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষের এই প্রশ্নটির উত্তর জানা থাকার কথা,কারণ “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল” যার নাম দেখেই বুঝা যায় বিএনপি আদর্শ কি!
কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাট হল জাতীয়তাবাদ!
তাই Bangladesh Nationalist Party-BNP এর নাম দেখে বলে দেওয়া যায় A beautiful name is better than a lot of wealth বাক্যের এর মত একটি সমৃদ্ধশালী জাতীয়তাবাদী দল।
এবার আসা যাক,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -Bangladesh Nationalist Party- BNP এর আদর্শ কি? যার আদর্শ জাতীয়তাবাদ (Nationalism).কি জাতীয়তাবাদ? বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ (Bangladeshi Nationalism).

জাতীয়তাবাদ হলো একটি জাতি বা দেশের প্রতি গভীর অনুভূতির একটি আদর্শ, যেখানে সেই জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক মতবাদ, যা জাতি-রাষ্ট্র গঠনের উপর জোর দেয় এবং জাতীয় স্বার্থকে অন্য সবকিছুর উপরে স্থান দেয়।

জাতীয়তাবাদের জনক হিসাবে সাধারণত জিউসেপ্পে মাৎজিনি (Giuseppe Mazzini) কে গণ্য করা হয়। তিনি একজন ইতালীয় বিপ্লবী এবং জাতীয়তাবাদী ছিলেন, যিনি “জুয়াং ইতালিয়া” (Young Italy) নামক একটি জাতীয়তাবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা ইতালিকে একটি জাতি হিসেবে একত্রিত করার জন্য কাজ করে।
আধুনিক জাতীয়তাবাদের জনক হিসেবে নিকোলাও (Niccolò) ম্যাকিয়াভেলি (Machiavelli) কে চিহ্নিত করা হয়। তিনি ছিলেন ইতালীয় দার্শনিক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী. তার “দ্য প্রিন্স” (The Prince) নামক বিখ্যাত বইটিতে আধুনিক রাষ্ট্রনীতি এবং রাজনৈতিক চিন্তার ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে. ম্যাকিয়াভেলী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের ধারণা দিয়েছিলেন.

জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য:
জাতি বা দেশের প্রতি আনুগত্য:জাতীয়তাবাদীরা তাদের দেশের প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করে।
জাতিগত ঐক্যের ধারণা:এটি জাতি বা দেশের জনগণের মধ্যে একটি ঐক্যের অনুভূতি তৈরি করে, যা তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে।
জাতি-রাষ্ট্র গঠনের উপর জোর:জাতীয়তাবাদ জাতি-রাষ্ট্র গঠনের ধারণাটিকে সমর্থন করে, যেখানে একটি জাতি তার নিজস্ব সরকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার:জাতীয়তাবাদীরা তাদের জাতির স্বার্থকে সবকিছুর উপরে স্থান দেয় এবং সেই স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পরিচয়:এটি একটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা,ধর্ম ও ইতিহাসকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং তা রক্ষা করার চেষ্টা করে।

জাতীয়তাবাদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রকারভেদ:

নাগরিক জাতীয়তাবাদ:এই জাতীয়তাবাদের ধারণাটি জাতিগত পরিচয়ের চেয়ে নাগরিককে বেশি গুরুত্ব দেয়। যেমন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ,সৌদি জাতীয়তাবাদ,ভারতীয় জাতীয়তাবাদ,নেপালী জাতীয়তাবাদ,আমেরিকান জাতীয়তাবাদ।

জাতিগত জাতীয়তাবাদ:এই জাতীয়তাবাদ জাতিগত ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের উপর জোর দেয়।যেমন বাঙালি জাতীয়তাবাদ,আরব জাতীয়তাবাদ,কুর্দি জাতীয়তাবাদ,তুর্কী জাতীয়তাবাদ,সিংহলি জাতীয়তাবাদ,তামিল জাতীয়তাবাদ,বেলুচ জাতীয়তাবাদ।

ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ : ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ দেশের ঐতিহাসিকভাবে প্রধান ধর্ম তার জাতীয় পরিচয় এবং নীতি নির্ধারণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ হওয়া উচিত এই বিশ্বাসকে ধারণ করে।যেমন মুসলিম জাতীয়তাবাদ,হিন্দু জাতীয়তাবাদ,খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ,ইহুদী জাতীয়তাবাদ,বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ।

এবার আসা যাক, নাগরিক জাতীয়তাবাদ নিয়ে আলোচনা :বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হলো একটি নাগরিক জাতীয়তাবাদ যা বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বসবাসকারী সকল নাগরিকের
বহু দল, বহু ধর্ম, বহু আঞ্চলিক পরিচয় ও সংস্কৃতির উপর জোর দেয়।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীরউত্তম)।তিনি ১৯৭৫ সালের পর থেকে এই মতাদর্শটি জাতির সামনে নিয়ে আসেন এবং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা মূলত বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের আত্মিক বন্ধনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং এই মতাদর্শের ভিত্তিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য -বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জাতিগত বা ভাষাগত পরিচয়ের চেয়েও বেশি জোর দেয় বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বসবাসকারী সকল নাগরিকের উপর।

আঞ্চলিক পরিচয়:এটি বাংলাদেশের আঞ্চলিক সীমানা ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করার উপর জোর দেয়।

একক জাতীয় পরিচয়:সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য হলো জাতি, ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের মধ্যে একটি অভিন্ন জাতীয় পরিচয় গড়ে তুলে যা অন্যন্য জাতীয়তা থেকে স্বতন্ত্রভাবে একক জাতীয়তা ভিত্তিক নিজেদের জাতীয় পরিচয় তুলে ধরে।
তাই বলা যায় চাই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হল বাংলাদেশের ভূখন্ডে বসবাসকৃত সকল জাতির জন্য সৃষ্ট বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভালোবাসা, যা সেই জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষা করে এবং বাংলাদেশি রাষ্ট্রের প্রতি প্রবল আনুগত্যের উপর জোর দেয়,যেখানে দেশের স্বার্থকে অন্যান্য স্বার্থের উপরে স্থান দেওয়া হয়।যা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক জাতি রাষ্ট্রের প্রতি গভীর আনুগত্যের উপর জোর দেয় এই দেশের মানুষ দেশের প্রতি আবেগপ্রবণ থাকে,যা তাদের মধ্যে এক ধরনের দলীয় মানসিকতা তৈরি করে এবং একটি জাতিগত ঐক্যের ধারণা দেয়,যা মানুষের মধ্যে এক ধরনের সংহতি তৈরি করে এবং তাদের একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে এবং জাতির স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের উপর জোর দিয়ে নিজেদের জীবন এবং সংস্কৃতি রক্ষার জন্য স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কোনো বিদেশি শক্তির অধীনে থাকতে সম্পুর্ন ভাবে নিরুৎসাহিত করে।

জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ: আজকের বাস্তবতা ও বিএনপি-
বহু মত, বহু দল, বহু ধর্ম, বহু সংস্কৃতির বাংলাদেশকে একক বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ছাতায় নিয়ে এসেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আধিপত্যবাদের রক্তচক্ষুকে চ্যালেঞ্জ করে শীর উঁচু করে, চোখে চোখ রেখে, জাতিকে নিজের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে জিয়া।
অনেকেই জাতীয়তাবাদের সাথে ইসলামের সাংঘর্ষিকতা খুঁজলেও জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্কে গড়ে তুলে মানুষের মাঝে ধারণা দিলেন ইসলাম জাতীয়তাবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে।তিনি মনে করেন মুসলিমরা তাদের নিজ দেশের প্রতি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্বশীল এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে, যা ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।তাই তিনি ৭২ এর ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে ব্যাপক সংশোধনী এনে সংবিধানের মূলনীতি সহ একাধিক সংশোধনী নিয়ে আসেন।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম’ সংযোজন করেন।
সংবিধান থেকে সংকীর্ণ “বাঙালি জাতীয়তাবাদ” অপসারণ করে স্বতন্ত্র একক জাতীয়তাবাদ “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” অন্তর্ভূক্ত করেন।
সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে সংবিধানে “সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” যুক্ত করেন
২৫(২) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ ও জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন।
এবং সর্বোপরি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সহ সব রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করে দলগুলোকে নিবন্ধনের অনুমতি দেন।

এখানে উল্লেখ্য কেন তিনি সংবিধান থেকে সংকীর্ণ “বাঙালি জাতীয়তাবাদ” অপসারণ করে স্বতন্ত্র একক জাতীয়তাবাদ “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” অন্তর্ভূক্ত করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা করেন।
একটা ছিল জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান।আমাদের জাতিগত পরিচয় কী বাঙালি, না বাংলাদেশি? এই প্রশ্ন অন্যদের মতো তাকেও গভীরভাবে আন্দোলিত করেছিল। যেমন শেখ মুজিব বাঙালি, তেমনি জিয়াউর রহমানও বাঙালি।আমি নিজেও বাঙালি। কিন্তু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা কী বাঙালি? ঔক্যতং চাকমা? অথবা মহিন্দর গারো?
বাংলাদেশের গণপরিষদে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা
বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হওয়ার সময়ে যখন জাতিগত পরিচয় বাঙালিত্ব গ্রহণের সময় তিনি বিতর্কে অংশগ্রহণ করে যা বলেছিলেন তা উল্লেখযোগ্য। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর গণপরিষদে বলেছিলেন, ‘আমি একজন চাকমা। একজন মারমা কখনো চাকমা হতে পারে না। একজন চাকমাও বাঙালি হতে পারে না। আমি একজন চাকমা। আমি বাঙালি নই। আমি বাংলাদেশের নাগরিক। একজন বাংলাদেশি। আপনিও একজন বাংলাদেশি, কিন্তু জাতিগত পরিচয়ে একজন বাঙালি। তারা উপজাতীয়রা কখনো বাঙালি হতে পারে না।
মানবেন্দ্র লারমার যুক্তি সঠিক হলেও তার যুক্তি শোনার ধৈর্য কারো ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমান উপজাতীয়দের বাঙালি হয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েই সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন।ফলে সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্তত ৫৭টি স্বতন্ত্র উপজাতী রাতারাতি হয়ে গেল বাঙালি।
উপজাতীয় জনগণ সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল। জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলো এবং অশান্ত হয়ে উঠলো পুরো পার্বত্য চট্রগ্রাম।
পাহাড়ে আস্তে আস্তে শান্তিবাহিনী ভারতের মদদে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে থাকে।
৭৫ এর সিপাহি জনতার বিপ্লবে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাবের পর তিনি পার্বত্য চট্রগ্রাম সফরে গিয়ে জানিয়ে দিলেন আপনারা বাঙালি নয়, বাংলাদেশি।
এভাবে সৃজনশীল মেধার সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটিয়ে জিয়া জানান দিলেন শুধু বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির ঐক্যের ভিত্তিতে যে জাতীয়তা গড়ে ওঠে না, এ জন্য প্রয়োজন হয় জনসমষ্টির ঐতিহাসিক অর্জনের উজ্জ্বল স্মৃতি, ভৌগোলিক ঐক্যসূত্র, ধর্মীয় চেতনার সুষ্ঠু বন্ধন
এভাবে একক স্বতন্ত্র বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শন বাস্তব ও চূড়ান্ত রূপ লাভ করে বাংলাদেশে।
যার যাত্রায় তিনি ১৯৭৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।

সেই থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারক এবং বাহক হয়ে কাজ করছে।
তখন থেকে বিএনপির ভিতরে একটা নীতি কাজ করে
তা হচ্ছে- ‘নানা মানুষ নানা মত,দেশ গঠনে ঐক্যমত’।
দলে নানা মতের মানুষ আছে ঠিকই কিন্তু দেশ গঠনে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদি আদর্শে তারা ঐক্যমতের ধারণা পোষণ করে।

জাতীয়তাবাদের নিকট অতীত এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ:-

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গে কলকাতার হিন্দুদের বিরোধিতা কারণে ঢাকায় ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ সৃষ্টি হয়
পরবর্তীতে যার কারণে মুসলিম জাতীয়তাবাদের জাগরণে ৪১ বছর পর ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় পাকিস্তান কিন্তু মুসলিম জাতীয়তাবাদ একসময় এই দেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কাছে পরাস্ত হয়ে ২৩ বছর পর বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদও ব্যার্থতায় পর্যবাসিত হয়ে পুরো পার্বত্য চট্রগ্রাম অশান্ত হয়ে পড়ে এবং দেশ জাতিগত বিভক্তির দারপ্রান্তে চলে যায় তখন প্রেসিডেন্ট জিয়ার সেই কালজয়ী দর্শন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দর্শন এই দেশের জাতিগত বিভক্তি ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

তাই বলা বাহুল্য বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আদর্শই এই দেশের সবচেয়ে সাসটেইনেবল দর্শন।
যা এই ভূখন্ডে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সফলভাবে ঠিকে আছে অন্যান্য জাতীয়তাবাদ থেকে।।
এখানে উল্লেখ্য,এই ভূখন্ডে মুসলিম জাতীয়তাবাদের আয়ুকাল -১৯০৬-১৯৭০,বাঙালি জাতীয়তাবাদের আয়ুকাল ১৯৭০-১৯৭৫ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আয়ুকাল ১৯৭৫-বর্তমান।

বিশ্বাস,যতদিন ১৪৭,০০০ বর্গমাইলের এই দেশ থাকবে ততদিন এই কালজয়ী বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দর্শন থাকবে যা মুসলিম,সনাতন এবং পাহাড়ি সবাই স্ব স্ব আইডেন্টিটি নিয়ে একসাথে চলতে সামন্যতমও কোন বিরোধ উৎপন্ন করেনা।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার এই কালজয়ী বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের বাহিরে যারা চিন্তা করে তারা কখনো বিএনপি নয় বরং বিএনপির আদর্শচ্যুত অতি ডান ও অতী বাম।
তাই বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন বিএনপি হল ডানের বাম এবং বামের ডান।
এর বাহিরে আপনি বিএনপি খোঁজতে গেলে সেইটা আর বিএনপি থাকেনা ,তখন হয়ে যায় অন্যদল।

বিএনপি ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এইরকম স্বতন্ত্র একক জাতীয়তাবাদের আদর্শ ধারণ করে বলেই বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই প্রাসঙ্গিক।

-সেলিম সিরাজী
জুলাই গন অভ্যুত্থানের কারানির্যাতন রাজনৈতিককর্মী