ডেস্ক নিউজ:
দেশের বিদ্যমান সেবাখাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। ২০১৭ সালে সার্বিকভাবে ৬৬.৫ শতাংশ মানুষ সেবাখাতগুলোতে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭২.৫ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়, পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে ৬৭.৩ শতাংশ এবং বিআরটিএ-তে ৬৫.৪ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৭ সালে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রশাসন, ভূমি সেবা, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক সেবা, বিদ্যুত, ব্যাকিং, বিআটিএ, কর ও শুল্ক, এনজিও, পাসপোর্ট, বীমা, গ্যাস সেবাখাতের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে টিআইবি।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত সেবাখাত হিসেবে উঠে এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। দ্বিতীয় স্থানে পাসপোর্ট, তৃতীয় বিআরটিএ ও চতুর্থ স্থানে বিচারিক সেবাখাত উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে মাইডাস ভবনে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ‘সেবাখাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশকালে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ও গবেষণা উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিষদ ড. সুমাইয়া খায়ের ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহারকে দুর্নীতির সংজ্ঞা হিসেবে উল্লেখ করেছে টিআইবি। সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী, সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যেসব দুর্নীতির শিকার হয়েছেন সেগুলো হচ্ছে- ঘুষ, সম্পদ আত্মসাৎ, প্রতারণা, দায়িত্বে অবহেলা, স্বজনপ্রীতি ও প্রভাব বিস্তার। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাদের।

২০১৭ সালে খানা প্রতি ৫ হাজার ৯৩০ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে সাধারণ মানুষ এবং সর্বোচ্চ ঘুষ আদায়ের তিনটি খাত হলো গ্যাস (৩৩ হাজার ৮শ ৫ টাকা), বিচারিক (১৬ হাজার ৩শ ১৪ টাকা) এবং বীমা খাত (১৪ হাজার ৮শ ৮৬ টাকা)।

২০১৭ সালে জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ ১০ হাজার ৬শ ৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের(সংশোধিত) ৩.৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশের জিডিপির ০.৫ শতাংশ। মাথাপিছু প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ২০১৭ সালে ৬৫৮ টাকা; যা ২০১৫ সালে ছিল ৫৩৩ টাকা।

টিআইবি আরও বলছে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে কোনো কোনো খাতে দুর্নীতি উল্লেখ্যযোগ্য হারে বেড়েছে, যেমন- গ্যাস, কৃষি, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা) এবং কোনো কোনো খাতে দুর্নীতি কমেছে যেমন শিক্ষা, পাসপোর্ট ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান।

২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে কোনো কোনো খাতে ঘুষের শিকার খানার হার বেড়েছে (কৃষি, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা) এবং কোনো কোনো খাতে কমেছে (শিক্ষা, পাসপোর্ট, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান)। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সেবাখাতে ঘুষের শিকার খানার হার কমলেও ঘুষ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে।

জরিপে দেখানো হয়েছে, ঘুষ প্রদানকারী খানার ৮৯ শতাংশ ঘুষ দেয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না’ অর্থাৎ ঘুষ আদায়কে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে; যা ২০১৫ সালে ছিল ৭০.৯ শতাংশ।

হয়রানি বা জটিলতা এড়াতে ঘুষ দিয়েছেন ৪৭.১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা, নির্ধারিত ফি জানা না থাকায় অতিরিক্ত অর্থ দিয়েছেন ৩৭ শতাংশ, নির্ধারিত সময়ে সেবা পেতে ২৩.৩ শতাংশ, আরও দ্রুত সময়ে সেবা পেতে ঘুষ দিয়েছেন ৪.৩ শতাংশ, অবৈধ সুবিধা বা সুযোগ প্রাপ্তির জন্য ঘুষ দিয়েছেন ২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা।

দুর্নীতির শিকার খানার হারের তুলনামূলক চিত্রে দেখানো হয়েছে- ২০১২ সালে ছিল ৬৭.৩ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৬৭.৮ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে তা দাঁড়ায় ৬৬.৫ শতাংশ। টিআইবির দাবি দুর্নীতি কমার এ হার গ্রহণযোগ্য নয়।

সার্বিক পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৭২.৫ শতাংশ মানুষ। ঘুষ দিয়েছেন ৬০.৭ শতাংশ মানুষ, যার পরিমাণ ২ হাজার ১শ ৬৬ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজ। এ খাতে দুর্নীতির শিকারে হয়েছেন ৬৭.৩ শতাংশ মানুষ। এ খাতে মোট ঘুষ দিয়েছেন ৫৯.৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতা, যার পরিমাণ ৪৫১ কোটি টাকার বেশি।

তবে জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের দিক থেকে সবার ওপরে ভূমি সেবা খাত। এ খাতে দুর্নীতি হয়েছে ২ হাজার ৫শ ১২ টাকার।

সার্বিক পর্যবেক্ষণে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের তালিকায় পাসপোর্টের পরে রয়েছে বিআরটিএ (ঘুষের পরিমাণ ৭১০ কোটি টাকা), বিচারিক সেবা (ঘুষের পরিমাণ ১২৪১ কোটি টাকা), ভূমি সেবা, শিক্ষা (ঘুষের পরিমাণ ৪৫৫ কোটি টাকা), স্বাস্থ্য (১৬০ কোটি টাকা)।