ইমরান হোসাইন, পেকুয়া :

মোঃ রাশেদুল ইসলাম। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের করলিয়া পাড়া এলাকার শফিউল আলম ও হাসিনা বেগম দম্পতির তৃতীয় সন্তান সে। আরো দুই বোন আর তিন ভাই মিলে তাদের পরিবার।

দিনমজুর বাবার ছিলনা কোন জমিজমা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার মজুরির আয়ে তাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। তাই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল পিতা শফিউল। কিন্তু তাই বলে কি আর জীবন থেমে থাকবে ? জীবন তো থেমে থাকার নয়।

অদম্য রাশেদ পড়াশোনায় ছিল বেশ আগ্রহী। প্রাথমিকের গন্ডি না পেরুতে শুরু করেন টিউশনি। টিউশনি থেকে যতসামান্য আয় এবং নিকটাত্মীয়দের সহযোগিতায় এগুতে থাকে তার পড়াশোনা। এভাবে মগনামা মাঝির পাড়া শাহ রশিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ২০১২সালে জেডিসিতে উত্তীর্ণ হয় সফলতার সাথে ।

এরপর মা-বাবার অনুমতি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন ১৪বছরের কিশোর রাশেদ। চট্টগ্রামের পটিয়া গিয়ে শুরু করেন জীবনের আরেকটি কঠিন যুদ্ধ। লজিং টিউশনি করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন পড়াশোনা। আর এভাবেই পটিয়া শাহ চান্দ আউলিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ২০১৪ সালে পাশ করেন মাধ্যমিক। একই মাদ্রাসা থেকে ২০১৬সালে পাশ করেন উচ্চ মাধ্যমিক। বর্তমানে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত সে।

কিন্তু এভাবে বড় হওয়া যে কষ্টসাধ্য তা বুঝে গিয়েছিল রাশেদ। অসহায়ের তকমা গুছিয়ে সমাজে মাথা উচু করে দাঁড়াতে বিকল্প রাস্তা তাকে ধরতেই হবে। তাই সে মনোনিবেশ করলো খেলাধুলায়। শিখতে লাগলো তার শৈশবের প্রিয় খেলা কারাতে। সময়ের সাথে সাথে তার রক্তে মিশে যায় এই খেলা। স্বপ্ন দেখে কারাতে নিয়ে অনেকদূর যাবার, বিশ্ব মাঝে দেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরার।

হ্যা, রাশেদ চলে গেছে তার স্বপ্নের খুব কাছাকাছি। কারাতের মাধ্যমে কুড়িয়েছে অসামান্য সম্মান। করেছে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল। নিয়মিত স্কুল কলেজের ফি দিতে না পারা সেই রাশেদুল ইসলাম এখন দক্ষিন এশিয় ভভিনাম চ্যাম্পিয়ন। গত ১৯-২১জুলাই ঢাকার মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে কারাতে কংফুর সমন্বয়ে ত্রিদেশীয় এ টুর্নামেন্টে গোল্ড মেডেল জয় করে সে।

এব্যাপার মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, একবার খেলতে গিয়ে আমার পা ভাঙ্গে। তা দেখে আমার মা ভীষণ ভয় পায়। তাই কারাতে নিয়ে পরিবার আমাকে কখনো সাপোর্ট দেয়নি। কিন্তু আমি হাল ছাড়ার পাত্র ছিলাম না। একটা টান কাজ করতো সবসময়। কেন যেন মনে হতো, কারাতে ছাড়া আমার সময় কাটবে না।

রাশেদ আরো বলেন, আমার এই অর্জনের পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার মামা আবু তালেব এবং আমার ওস্তাদ দিলদার হাসান দিলুর। মামা আবু তালেব আমাকে যুগিয়েছেন সাহস, দিয়েছেন আর্থিক সহযোগিতা। ওস্তাদ দিলদার হাসান দিলু দিয়েছেন হাতেকলমে প্রশিক্ষণ। পরিশেষে আমি সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি যেন, এই কারাতের মাধ্যমে আমি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পাতা উঁচিয়ে রাখতে পারি, বিশ্বজয় করতে পারি।

উল্লেখ্য, চলতি বছর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ ভভিনাম টুর্নামেন্ট শুরু হয়। টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন নির্বাচিত হয়ে গোল্ড মেডেল জয় করে মোঃ রাশেদুল ইসলাম। অলিম্পিক আসরকে টার্গেট করে এ টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন আয়োজকরা। আয়োজকরা আশা করছেন, অলিম্পিকের আগামী আসরে ইভেন্ট হিসেবে ভভিনামকে দেখা যাবে।