ডেস্ক নিউজ:
দেশে এমবিবিএস ও বিডিএস ডাক্তারের সংখ্যা লাখের কোটা ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সর্বশেষ (৫ জুলাই) তথ্যানুসারে রেজিস্টার্ডভুক্ত ৮৮ হাজার ৩০ জন এমবিবিএস ও ৮ হাজার ৫২৪ জন ডেন্টালসহ মোট ৯৬ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন।
বিএমডিসির প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে যারা ইন্টার্নি পাস করেছেন তারা এখন রেজিস্ট্রেশন করতে প্রতিদিন বিএমডিসিতে আসছেন। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জনের রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। আগামী ২/১ মাসের মধ্যে এমবিবিএস ও বিডিএস পাসকৃত ডাক্তারের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া জানান, কয়েক বছর আগে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ থেকে প্রতি বছর গড়ে মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার চিকিৎসক পাস করে বের হলেও বর্তমানে এ সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। নতুন কয়েকটি মেডিকেল কলেজ থেকে আগামী ২/১ বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হলে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছর ১০ হাজার ডাক্তার পাস করে বের হবে।
বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপাকালে জানা গেছে, ডাক্তারের সংখ্যা লাখের কোটা ছুঁই ছুঁই করলেও রোগীরা আস্থা রাখতে পারেন এমন ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম। সাধারণ রোগব্যাধি সারানোর জন্য চিকিৎসকের অভাব না থাকলেও বিশেষায়িত বিভিন্ন রোগব্যাধি বিশেষত অসংক্রামক রোগব্যাধির (ক্যান্সার, কিডনি, ডায়াবেটিস, নিউরো সার্জারি, লিভার, নিউরো মেডিসিন ইত্যাদি) চিকিৎসার জন্য রোগীরা খুব কম সংখ্যক বিশেষজ্ঞের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন।
এসব জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা রাজধানী ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী সুচিকিৎসার আশায় রাজধানীতে ছুটে আসছেন। দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে হাজার হাজার ডাক্তার কর্মরত থাকলেও খুবই স্বল্পসংখ্যক ডাক্তারের ওপর ভরসা থাকায় রোগীরা তাদের চেম্বারে দৌঁড়াচ্ছেন।
কোনো কোনো চিকিৎসকের সিরিয়াল পেতে তিন মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। মন্ত্রী, সচিব, রাজনৈতিক, চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধ উপরোধ করে কিংবা ডাক্তারের পিয়নকে উৎকোচ দিয়ে আগে সিরিয়িাল পেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা আজমত আলী বলেন, বড় ডাক্তার ছাড়া নতুনদের ওপর ভরসা করতে পারি না। সিরিয়াল পেতে বিলম্ব হলেও তাদেরকে দেখিয়ে মানসিক শান্তি পাই।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে দেখি ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামা, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক ও ল্যাবরেটরি সুবিধা নেই। এ কারণে সন্দেহ জাগে, ওইসব মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা ডাক্তাররা কি আদৌ রোগীদের সুচিকিৎসা দিতে পারবে?
এদিকে বড় ডাক্তারদের চিকিৎসা নিয়েও হাজার হাজার রোগীর মনে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। রিফাত হোসেন নামে রামপুরা এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তিনমাস আগে তার মায়ের পেটে একটি অস্ত্রোপচার হয়। তার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর মায়ের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। অনেক কষ্ট করে রাজধানীর কয়েকজন বড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলেও মায়ের সমস্যার কথা তারা ভালো করে শুনতে চাননি। বড় ডাক্তাররা তাগাদা দিয়ে বলেন, ‘বলেন, কী বলবেন, বলেন?’ এরপর কতগুলো টেষ্ট ধরিয়ে দেন।
রিফাত আক্ষেপের সুরে আরও বলেন, ‘মায়ের অসুখ সম্পর্কে খোলা মন নিয়ে কথা শুনবেন এমন একজনও ডাক্তার পেলাম না।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ১০০। তার মধ্যে সরকারি ৩৬টি ও বেসরকারি ৬৪টি। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ডেন্টাল কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে ৩৩টি। এর মধ্যে সরকারি ৯টি, বেসরকারি ২৪টি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের একজন প্রবীণ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে চাল ডাল ও ভূমি ব্যবসায়ীরা শুধু ভর্তি ব্যবসার জন্য কিন্ডার গার্টেনের মত মেডিকেল কলেজ খুলেছেন। সেগুলোতে নেই অভিজ্ঞ শিক্ষক, রোগীশূন্য থাকছে হাসপাতাল। ফলে এসব মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা শেষ করে কী মানের ডাক্তার বের হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডাক্তার পাস করে বের হলেও হাতেগোনা ২/১শ’ ডাক্তার সরকারি চাকরি পাচ্ছেন। এ ছাড়া খুব কম বেতনে প্রাইভেট হাসপাতালে কিছু ডাক্তার চাকরি পান।
বেকার চিকিৎসকদের কেউ কেউ বিনা বেতনে কাজ করতে বিভিন্ন হাসপাতালে ধর্ণা দেন। হতাশা থেকে বহু তরুণ চিকিৎসক রোগীকে সুচিকিৎসা দেয়ার চেয়ে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনে জড়িয়ে পড়েন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।