অটো রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ জোগান। আর্থিক সংগতি বলতে তার এতটুকুই। দিনের রোজগার দিয়ে দিনের খরচ চলে। আয়-রোজগারের দিক থেকে প্রহ্লাদ খুবই সাধারণ মানের হলেও মনের দিক থেকে তিনি যে অসাধারণ তার স্বাক্ষর রাখছেন চলতি রমজান মাসে।
ভারতের উত্তর প্রদেশের এই ৩৪ বছর বয়সী যুবা গাড়ি চালান দক্ষিণ দিল্লীতে। এ বছর রমজান শুরুর পর তার মনে হল, ভিন ধর্মী মুসলিমদের জন্য কিছু একটা করবেন।
এবার রমজানে উপমহাদেশ অঞ্চলে প্রচণ্ড রোদ থাকছে দিনের বেলা। দিল্লীতেও একই অবস্থা। কড়া রোদের মধ্যে রাস্তায় গাড়ি চালাতে চালাতে কীই বা করতে পারেন? হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো, রাস্তায় থাকা রোজাদারদের অনেকেই তো বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করবেন। তাহলে তাদেরকে বিনা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন তিনি!
যেই চিন্তা সেই কাজ। প্রথম রোজা থেকেই শুরু করে দিলেন তার সেবা। নিজের অটোর সামনে একটি স্টিকারও লাগিয়ে রেখেছেন। তাতে লেখা ‘শুধু রোজাদার ব্যক্তিদের জন্য ফ্রি অটো সার্ভিস’।
ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমকে প্রহ্লাদ জানিয়েছেন, ভাড়ার ট্রিপের পাশাপাশি দিনে ৮ থেকে ১০টি ফ্রি ট্রিপ দিচ্ছেন রোজাদারদের জন্য। স্বীকার করলেন এতে অবশ্য তার কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণত দৈনিক যে আয় হতো ফ্রি ট্রিপ দিতে গিয়ে তাতে ভাটা পড়েছে।
কিন্তু এরপরও খুশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী এই ব্যক্তিটি। বললেন, ‘আমার মনে হলো দিনের বেলার এই কড়া রোদে রোজাদার কিছু মানুষের একটু হলেও উপকারে আসতে পারি। এর মাধ্যমে তাদের দোয়া পাবো। আমি অটো চালক মানুষ। এর চেয়ে বেশি কিছু করার সাধ্য আমার নেই।’
প্রহ্লাদ জানান দুই ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর সংসার। গত চার বছর ধরে অটো চালাচ্ছেন। ধর্ম বিষয়ে তার মনোভাব জানালেন এভাবে, ‘আসলে সবার ধর্মই এক। ঈশ্বর তো একজন। লোকে শুধু আমাদের মধ্যেকার পার্থক্য খুঁজে বের করে। এই মানসিকতা বদলাতে হবে। যত বদলাবে তত ভালো।
তার এই সম্প্রীতিপূর্ণ মনোভাব ও কাজ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয়দের আলোড়িত করছেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রহ্লাদের প্রশংসা করে নানা পোস্ট দিচ্ছেন বিভিন্নজন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।