সাইফুল ইসলাম :

কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় কেটে ও মাটি ভরাট করে অনুমতি বিহীন অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শুরুতে  ৬৭টি বহুতল ভবন নিমার্ণের অনুমতি দেয়া হলেও অনুমতি ছাড়া শতশত ভবনের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ভূমি ব্যবহারের ছাঁড়পত্র দিয়েছে ২৭৯টি। এ বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরণের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচলিত আইন মোতাবেক এটি শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এ কারণে একদিকে যেমন পর্যটন নগরী হিসেবে পরিবেশ সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়বে অন্যদিকে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পাহাড়ের নিচে বসবাস করা অনেক পরিবার।

উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণ কক্সবাজারের ঐতিহ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরুপ দাড়াঁচ্ছে বলে জানান সচেতন মহল। যারা পাহাড় কেটে ও মাটি ভরাট করে অনুমতি বিহীন ভবণ নিমার্ণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তর পক্ষ থেকে অতি-শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের ১৭ আগষ্ট। শুরু থেকেই এ পর্যন্ত তারা বহুতল ভবন নির্মানের অনুমতি দিয়েছে ৬৭টি। পাশাপাশি ভূমি ব্যবহারের ছাঁড়পত্র দিয়েছে ২৭৯টি। তবে অনুমতি দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারী থেকে। অনেক ভবন ও ভূমির ছাড়পত্রের ফাইল প্রসেসিংও রয়েছে। তবে অনুমতি বিহীন বহুতল ভবন করার কারণে অনেক ভবনের মালিককে নোটিশও দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুমতি ছাড়া কাজ চালিয়ে যাওয়া বহু ভবনের নির্মাণকাজ স্থগিতও করা হয়েছে। তারপরও যারা পাহাড় কেটে বহুলত ভননের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্বে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শহরের দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লির বিভিন্ন অলিগলিতে, বাসটার্মিলের পশ্চিম ও উত্তর পাশ্বে, উপজেলা পরিষদের আশপাশে, ঘোনার পাড়া, লারপাড়া, আলিঁর জাহাল, কলাতলীর আশপাশে, চন্দ্রিমায়, পাহাড়তলী, গোদার পাড়া ও টেকপাড়ার অলিগলিতেসহ বিভিন্ন জায়গা বহুতল ভবণের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অনুমতি বিহীন।

এদিকে দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লি এলাকার মো. ফয়জুল্লাহর ছেলে মো. তারেক নামে এক ব্যক্তি সরকারী পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। তার কাছে পাহাড় কাটা ও ভবনের অনুমতির কথা জিজ্ঞাসা করা হলে বলে, অনুমতি নিয়েছে। তবে কাজপত্র কোথায় বললে এখনো প্রসেসিং রয়েছে। একই ভাবে আলির জাহাল এলাকায় পাহাড় থেকে মাটি কেটে ভরাট করা ভবন নিমার্ণের মালিক মনজুর আলমকে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, বস্তা প্রতি ১০ টাকা দিয়ে কন্ট্রাক করে মাটি ভরাট করেছি এখানে আবার অনুমতি নিতে হয় কোথায় থেকে। এভাবে অসংখ্য ভবনের মালিক একই কথা বলে থাকে। এসব যত্রতত্র ভবনের কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সড়কের পাশেও যত্রতত্র অনুমতি বিহীন ভবন ও সাইন বোর্ডের কারণেও সৌন্দর্য হারাচ্ছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। যারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া বহুতল ভবণ নিমার্ণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি যারা পাহাড় কাটছে এবং পাহাড় কাটার সাথে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও।