সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও:
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওয়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে অবৈধ ডাম্পার। চলছে হরহামেশা গ্রামাঞ্চল ও বাজার কেন্দ্রিক সড়কে। বেপরোয়া চলাচলের কারনে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কম নয়। এমনকি দুর্ঘটনাও ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি এসব ডাম্পারের বেশি প্রভাব দেখা গেছে সদরের ঈদগাঁও,ইসলামপুর,জালালাবাদ,ইসলামাবাদ ও চৌফলদন্ডী সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে। অবৈধ ট্রাক বা ডাম্পার গ্রামীণ জনপদে সর্বনাশ ঘটাতে শুরু করেছে। যার কারনে আতংকিত জনপথ ও জনসাধারণ। এসব ডাম্পার সাধারণ পরিবহণ কাজে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা হলেও কতিপয় মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ফসলি জমির মাটি,রির্জাভ বনভুমির পাহাড়ি মাটি-গাছ, ছড়ার বালি পাচারের কাজে। এসব ডাম্পারের বেপরোয়া চলাচল গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার করে ধুলোয় পরিনত করে দিচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। ফসলি জমি খুড়ে গ্রাম ছড়ার বালি এবং পাহাড়ি মাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ডাম্পারের অত্যাচারে উল্লেখিত এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ,সড়ক-মহাসড়কে লাই¯েœসবিহীন ডাম্পার-ড্রাইভারদের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলাচলকারী মানুষ সার্বক্ষণিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ এই বাহনের অবাধ চলাচল দেখেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
জানা যায়, সুযোগ পেয়ে এক শ্রেণীর আমদানিকারক অবাধে আমদানি করে মিনি ডাম্পার। আমদানিকারকরা এসব ডাম্পার মাসিক ভাড়ায় অথবা বিক্রি করে ইটভাটার মালিক, মাটি ও বালি সহ সাধারণ পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে। ডাম্পারের রেজি: নং বা ড্রাইভারের জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় এসব পরিবহন ব্যবসায়ীরা স্বল্পমূল্যে সহজেই ক্রয় করেন। তারা এসব অবৈধ ডাম্পার সাধারন পরিবহনের পরিবর্তে ব্যবহার করছে অবৈধ কাজে। যার কারনে ঈদগাঁওর সর্বত্র ডাম্পারের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।
সুত্রে জানা গেছে, ঈদগাঁওর বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক ইটভাটায় কত সংখ্যক ডাম্পার রয়েছে তা জানার সহজ কোনো উপায় নেই। তবে বেসরকারি হিসেব মতে, ৬ ইউনিয়নে কমবেশি শতাধিক ডাম্পার এখন গ্রামের রাস্তায় অবাধে চলাচল করছে। ডাম্পারের বেপরোয়া চলাচলে নষ্ট হচ্ছে সড়ক উপসড়ক সমুহ। পিচ পাকা রাস্তা ভেঙে চুর্নবিচুর্ন হচ্ছে ইটের রাস্তা। গ্রামের সড়কগুলোতে মাটি আলগা হয়ে ধুলোই পরিনত হচ্ছে। বিলীন হতে শুরু করেছে গ্রামের চলাচল সড়ক। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দেখা গেছে ২০ থেকে ২৫ বছরের কিশোররাও অদক্ষভাবে এসব ডাম্পার অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। বেপরোয়া গতি ও কানফাটা আওয়াজে এসব ডাম্পারের কারণে গ্রামগুলোতে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ দেখা দিয়েছে। শব্দ ও বায়ূদুষণ এখন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে এসব ডাম্পার।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে,বিগত কয়েক বছরে অর্ধশতাধিক লোক ডাম্পারের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। যেটা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অবৈধ ডাম্পার ড্রাইভারদের ভয়ে সচেতন মানুষ সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। প্রায় সাড়ে ৩ টন ওজনের এই ডাম্পার রাস্তায় চলাচলের সময় কার উপর গিয়ে উঠে তা বলা মুশকিল হয়ে পড়ে। এসব ডাম্পারের ধাক্কায় পঙু হয়েছে বহু লোক। বিগত বছরে বহু সংখ্যক গরু, ছাগল ও মানুষ পিষ্ট হয়েছে এসব ডাম্পারের নিচে পড়ে। শুধু তাই নয় ডাম্পারের সাথে সংঘর্ষ ঘটলে ক্ষুদে যানবাহন ভেঙে চুরমার হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় চিহ্নও দেখা যায়না। সিএনজি, ইজিবাইক, মোটর চালিত রিকশা, প্যাডেল চালিত রিকশা, মোটর সাইকেলসহ বহুসংখ্যক যানবাহন ভেঙে চুরমার হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় গ্রামাঞ্চলে চলছে এসব অবৈধ ডাম্পার এমনতর প্রশ্ন সচেতন মহলের। অবৈধ এসব ডাম্পার গুলোকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান এলাকাবাসী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।