পেকুয়া সংবাদদাতা :

পেকুয়ায় গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করা সেই লাশটি উজানটিয়া ইউনিয়নের কিশোর মানিকের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। লাশ উদ্ধারের ৩ দিনের ব্যবধানে এর সন্ধান মিলেছে। গতকাল শনিবার ২৮ অক্টোবর দুপুরে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জট খোলেছে। ওই দিন পেকুয়া থানায় লাশ উদ্ধারের পর লাশটির পরিচয় নিয়ে অমিমাংসিত বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। মিলছে লাশটির পরিচয়। ওই দিন উজানটিয়া ইউনিয়নের সুতাচোরা ঠান্ডারপাড়া এলাকার মোক্তার আহমদের স্ত্রী জিঘারা বেগম নিশ্চিত করেছেন উদ্ধার হওয়া গলাকাটা এ লাশটি তার ছেলে মানিকের। এ খবর জানাজানি হলে পেকুয়ায় সর্বত্রে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার লাশটির ছবি ছডিয়ে দেওয়া হয়। ওই ছবি দেখে নিশ্চিত হয়েছেন লাশটি হতভাগা এ মায়ের একজন সন্তানের। এ সময় ওসির কক্ষে ওই মহিলার উপস্থিতি ছেলে নিখোঁজ ও লাশ উদ্ধারের বিবরণ দিতে গিয়ে হৃদয় ভেঙ্গে যায় এ জননীর। ছেলের এমন নির্মম পরিনতির কথা জানাতে গিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল দু’নয়নে চোখের জল। এ সময় তার আর্তনাথ ও বিলাপে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। জিঘারা বেগম পুলিশকে জানায়, উদ্ধার হওয়া লাশটি আমার ছেলে মানিকের। কেন তাকে এ ভাবে নির্মম ও নিষ্টুরভাবে খুন করা হয়েছে এ সম্পর্কে কোন বক্তব্য দিতে পারেননি এ নারী। জানা গেছে, চলতি বছরের ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন পর থেকে নিখোঁজ হন কিশোর মানিক। তার আনুমানিক বয়স হতে পারে ১৪-১৫ বছর। তিনি উজানটিয়া ইউনিয়নের সুতাচোরা এলাকার মোক্তার আহমদের কনিষ্ট ছেলে। জানা যায়, মানিক পেকুয়া সদর ইউনিয়নের জালিয়াখালী এলাকায় তার খালা দিলোয়ারার বাড়িতে থাকতেন। সেখানে খালুর সাথে মাছ শিকারের কাজ করতেন। বাড়ি থেকে আসার ১৫ দিন পর থেকে মানিক নিখোঁজ হন। গত ২৬ অক্টোবর বারবাকিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পাহাড়িয়াখালী বিলের ধান ক্ষেত থেকে দুপুরে পেকুয়া থানা পুলিশ গলাকাটা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে। এক রাখাল বিলে ঘাস কাটতে গিয়েছিল। সেখানে লাশটি জমিতে দেখতে পান। মস্তক বিচ্ছিন্ন ছিল। খোঁজাখোজি করে অল্প দুরে ধানক্ষেত থেকে মাথাও উদ্ধার হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট হয়েছে। মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। জানা গেছে, লাশটি মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। সনাক্ত না হওয়ায় সেটিকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। এ দিকে লাশটি মানিকের নিশ্চিত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ধু¤্রজাল তৈরী হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, মানিকের বড় ভাই সেকান্দর কক্সবাজার জেলে অন্তরীন রয়েছে। গত ২ বছর ধরে সেকান্দর কারাগারে। তার আপন চাচা শফিউল আলম বাদী হয়ে একটি মামলা করে। জানা গেছে, শফিউল আলমের মেয়ে শেকু বেগম গর্ভবতী হন। ওই মহিলা দাবী করেছেন তার ভূমিষ্ট সন্তানের পিতা এ সেকান্দর। বিয়ের প্রলোভনে তার সাথে সম্পর্ক করে। সেখানে গর্ভবতী হয়েছেন। পরবর্তীতে বিয়ের দাবীতে অনড় ছিল মেয়ে ও তার পিতা-মাতা। সেকান্দর বিষয়টি অস্বীকার করছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা জেল ও বিরোধ চরম আকার ধারন করে। সেকান্দরের মা জানায়, শেকুর সাথে তার খালাত ভাইসহ আরও কয়েকজনের সম্পর্ক ছিল। সেকান্দর নির্দোষ ছিল। মোক্তার আহমদের স্ত্রী জিগারা বেগম জানায়, ফাসিয়াখালী এলাকায় শেকু বেগমের খালার বাড়ি রয়েছে। সেখানে ধানক্ষেত থেকে মানিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার জানায়, লাশটি ছেলের বলে দাবী করছে ওই মহিলা। বিষয়টি অধিক নিশ্চিত করতে কক্সবাজার পাঠানো হয়েছে। ক্লু উদঘাটনের কাজ করছে পুলিশ। এখনও লিখিত এজাহার পাওয়া যায় নি।