ইমাম খাইর, সিবিএন:
রুবি আকতার (৩০)। শহরের ৯ নং ওয়ার্ড বাদশাঘোনা নতুনপাড়ায় তার বাড়ী। বিগত প্রায় ১০ বছর ওখানেই বসবাস। সংসারের মধ্যমনি স্বামী মোবারক শারীরিক প্রতিবন্ধি। অন্য দশজন মানুষের মতো হাঁটাচলা করতে পারেনা। ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে রুবির সংসার। ভিটেমাটি ছাড়া সম্বল বলতে আর কিছুই নেই তাদের। এরপরও সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। দিন মজুরি করে চলছে রুবি আকতারের সংসার। ইত্যবসরে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের খবর! যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। বসতভিটা হারানোর আতংকে রাতে ঘুম হয়না রুবির। শুধু রুবি নয়, তার মতো অসংখ্য আতংকগ্রস্ত নারী-পুরুষ মাথা গুজানোর শেষ আশ্রয় ভিটেমাটি অক্ষত রাখার আকুতি জানিয়েছে।
বাদশাঘোনা এলাকায় ৪ মেয়ের সংসার ষাটোর্ধ রশিদা বেগমের। স্বামী আসাদুজ্জামান মারা গেছে অনেক আগে। পরের বাসাবাড়ীতে কাজ করে চলছে রশিদার সংসার। তিনিও মাথা গুজানোর শেষ ঠিকানা হারানোর আশংকায় রয়েছে। শেষ আশ্রয়টুকুন কেড়ে না নিতে প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছে বিধবা রশিদা।৫ মেয়ে ২ ছেলে নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত দিন কাটছে স্বামী পরিত্যাক্তা বেবি আকতারের। আগে তার বসতি ছিল জাম্বুর দোকান এলাকায়। ওখান থেকে উচ্ছেদ করে বাদশাঘোনা এলাকায় তাদের পুনর্বাসন করে তৎকালীন প্রশাসন। কিন্তু আবারো মাথায় উচ্ছেদের খড়ক! দুঃখ পিছু ছাড়ছেনা ভূমিহীন এসব মানুষের। জন্মই যেন তাদের আজন্ম পাপ! এভাবে অতংকে দিনাতিপাত করছে ওই এলাকার অন্তত ৩ হাজার জনগণ। বারবার উচ্ছেদ নয়, স্থায়ী বসবাসের সুযোগ চায় বাদশাঘোনাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা এম. সাহাব উদ্দীন জনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছিলাম। আমাদের ভিটেমাটিতে দীর্ঘ মেয়াদি ফলের বাগান সৃজন করেছি। অধিকাংশ মানুষ কায়িক শ্রম দিয়ে জীবন কাটাচ্ছি। ইতোমধ্যে কোন নোটিশ ছাড়াই নৌ-বাহিনী আমাদের এলাকায় বাউন্ডারী ওয়াল দেয়া শুরু করেছে। পুনর্বাসনকৃত জায়গায় আমরা প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করে আসছি। অনাবাদী একটা জায়গা আমরা বসতি স্থাপন ও গাছপালা রূপনের মাধ্যমে বসবাস উপযুক্ত করেছি। এমন সময়ে আমাদের আবার উচ্ছেদের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, কাটা ঘাঁ-তে কয়বার নুন ছিটায়? আমরা একবার উচ্ছেদের শিকার হয়েছি। আর উচ্ছেদ নয়। এবার আমরা স্থায়ী বসবাস করতে চাই।নুরুল আবছার নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় আমাদের পুনর্বাসন করে প্রশাসন। জেলা সার্ভেয়ারের মাধ্যমে প্রত্যেক পরিবারকে ৫ শতক করে ঘর ভিটার জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের আবার উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এবার উচ্ছেদ করলে সাগরে ঝাঁপ দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোন পথ বাকী থাকবেনা।
এদিকে কক্সবাজার নৌ-বাহিনী কর্তৃক কক্সবাজার শহরের বৃহত্তর বাদশাঘোনা নতুনপাড়া এলাকা অসহায় মানুষের বাড়ীঘর উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসুচিতে এলাকার নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করে। দাবী তুলে তাদের বসতিতে আঘাত না করার। দুপুরের উত্তপ্ত রোদ মাথায় সড়কে অবস্থান নেয় উচ্ছেদ আতংকগ্রস্ত মানুষগুলো। এরপর জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনের সাথে সাক্ষাত করে তারা।এলাকাবাসীর অন্দোলনে সংহতি জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ার‌্যমান। তিনি নিজেই এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও তরুণ রাজনীতিবিদ শাহাব উদ্দিন জনির পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন- পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবির, মানবাধিকার কাউন্সিলের জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট একরামুল হুদা, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলম পেটান, পৌর শ্রমিকদল সভাপতি এস্তাক আহমদ, বাদশাঘোনা সমাজ কমিটির সভাপতি রশিদ আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা অভি।
আহমদুর রহমান জাম্বুর সভাপতিত্বে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলেজ ছাত্রী নাহিদা আক্তার টুম্পা, বেবি আকতার, রাবিয়া আকতার, ইয়াসমিন আকতার, জালাল উদ্দিন, নুরুল আবছার, জাফর আলম, মো. ফয়েজ, এডভোকেট আনোয়ার, শওকত আলী, স্থানীয় মুরব্বি আলী হোসেন প্রমুখ।