ডেস্ক নিউজ:
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বলেছেন, বিষয়টির ওপর জাতিসংঘের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে। অধিক জনসংখ্যার দেশ হয়েও বাংলাদেশ এই বিশাল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দীর্ঘদিন ধরে মানবিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে যা আমাকে মুগ্ধ করছে। আমি এই মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ, ইউএনডিপির প্রশাসক আকিম স্টেইনার এবং ইউএন-ওএইচআরএলএলএস এর প্রধান ও জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতামইলোয়া কাতোয়া ইউটোইকামানু এর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেন।

এ সময় মহাসচিব শরণার্থী বিষয়ক পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বর্তমান রোহিঙ্গা শরনার্থী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং এ সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের যা করণীয় তা তাঁরা করে যাচ্ছেন মর্মে মুহিতকে অবহিত করেন। বিশেষ করে তিনি এ বিষয়ে তাঁর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার নিশ্চয়তা দেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনের হাই লেভেল সপ্তাহে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার কথাও তিনি এ সময় উল্লেখ করেন।
নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিবের অফিসে গুতেরেজের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিউল আজম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম ও বাংলাদেশ মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুনসহ ৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।
অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সাক্ষাতের সময় অর্থমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ অনুযায়ী একটি ‘সেফ জোন’ গঠনসহ এ সঙ্কটের দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে অর্থমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য আন্তোনিও গুতেরেজকে অভিনন্দন জানান। তিনি বিশ্বব্যাপী চলমান সংকট, সহিংসতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পরিবেশগত উন্নয়ন এবং মানবিক সহযোগিতা প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান মহাসচিবের গতিশীল নেতৃত্বে জাতিসংঘ আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অর্থমন্ত্রী জাতিসংঘ সংস্কার কার্যক্রমকে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ উল্লেখ করে এর সাফল্য কামনা করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে জাতিসংঘের সংস্কার বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন এবং এ সংস্কার স্বল্পোন্নত দেশসমূহের অগ্রগতি ও উত্তরণের ক্ষেত্রে যাতে সহায়ক হয় তা নিশ্চিত করার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশসহ এলডিসি থেকে পরবর্তী ধাপে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নসহ সম্পদের যথাযথ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন গতিধারা সর্ম্পকে আলোকপাত করেন। তিনি জানান, এসডিজি ঘোষিত হওয়ার আগেই এর লক্ষ্যসমূহ নিয়ে বাংলাদেশ নিজস্বভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করে আসছিল যা এসডিজি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে একধাপ সামনে এগিয়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে মর্মে অর্থমন্ত্রী মহাসচিবকে অবহিত করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেজ অর্থমন্ত্রীকে ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এসডিজি বাস্তবায়ন, ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস, দূর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে ঝুকিপূর্ণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে মহাসচিব গুতেরেজ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশসমূহকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে জাতিসংঘের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে মর্মে অর্থমন্ত্রীকে জানান।
একইদিন অপরাহ্নে অর্থমন্ত্রী ইউএনডিপি’র সদরদপ্তরে ইউএনডিপির প্রশাসক আকিম স্টেইনারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে ইউএনডিপির প্রশাসক রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নসহ উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে ইউএনডিপি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে মর্মে ইউএনডিপি প্রশাসক অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
এর আগে অর্থমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ইউএন-ওএইচআরএলএলএস এর প্রধান ও জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতামইলোয়া কাতোয়া ইউটোইকামানু এর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশসমূহের পরবর্তী ধাপে উত্তরণের বিষয়সমূহ প্রাধান্য পায়।