ফারহানা কবির চৌধুরী

আমি আমার নিজের দেশ নিয়ে অসম্ভব রকম আশাবাদী। আমাকে যদি একশো বার এদেশে জন্মগ্রহণের সুযোগ দেয় , আমি চাইবো একশোবার এদেশের মাটিতেই জন্ম নিতে। এদেশের বৃষ্টিতে
ভিজতে চাইবো। এদেশের বাঁশ বাগানে জোসনা দেখতে চাইবো
-হুমায়ূন আহমেদ।

আমিও আমার দেশ নিয়ে ভীষণ রকমের আশাবাদী। আমার কল্পিত স্বপ্নে দেখি, বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উন্নত দেশ হবে, আমরা হবো পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য জাতি, অন্যান্য দেশগুলো তাদের শিক্ষা, কাজে,তাদের সামগ্রিক অগ্রগতিতে আমাদেরকে আর্দশ মেনে তাদের কাজ পরিচালনা করবে। আজকের যত উন্নত দেশ আছে, তারা তাদের একশো বছরের সিস্টেমের ফলস্বরূপ পৃথিবীতে উন্নত দেশ, সভ্য জাতির মর্যাদা লাভ করেছে। খুব দুঃখজনক হলেও আমরা এখনও একশো বছর সিস্টেমের প্রথম বছর টা আরম্ভ করতে পারিনি!!

আদৌ পারবো নাকি আমাদের নিজেদের দূর্নীতি,লোভ লালসা,হিংসা, আমাদের নিজেদের কে ধ্বংস করে দিবে। আমাদের মতো জাতি পৃথিবীতে নেই, এমন জাতি সবসময় নিজের দেশের ক্ষতির চিন্তা করি। কর্মক্ষেএে যার যা দায়িত্ব তা ঠিকমতো পালন করি না।

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রতিটি ক্ষেএে দূর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছাছে। মোটকথা, এদেশে ৯৯% কাজ দূর্নীতি ছাড়া হয় না। যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয় সেক্ষেএে সে দূর্নীতি করে বসে থাকে। দূর্নীতি বর্তমানে আমাদের দেশে মহামারী রুপ ধারন করেছে। সব ক্ষেত্রে অপচয়ের এক বিশাল দূর্নীতি।

এরকম মহামারী পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট আনতে দূর্নীতি। ভাবা যায় দূর্নীতি কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশে করোনা মহামারী তে দূর্নীতি করেছে কিনা আমার জানা নেই। উগাণ্ডার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বেশি দামে ইকুইপমেন্ট কেনার দায়ে তৎক্ষনাৎ গ্রেফতার করা হলো।কিন্তু আমাদের দেশে মামলা হলো,তদন্ত কমিটি হলো,এরপরের বাকি ইতিহাসটা কেউ জানেনা।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, তদন্তের দীর্ঘসূএতার কারণেই এ সমস্যা প্রকট হচ্ছে।

সিংগাপুর এর কথা বলি,ছোট্ট একটা দেশ স্বাধীন হয় ১৯৬৫ সালে।নেই কোন প্রাকৃতিক সম্পদ, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, নেই বিশুদ্ধ পানি। তারপরও তারা উন্নত দেশের মধ্যে একটি।কারন তাদের রয়েছে দেশ প্রেম।তাদের অগ্রযাএায় প্রধান নীতি ছিলো প্রথমে দূর্নীতি নির্মূল করতে হবে। ।তাদের মেধাকে তারা সঠিক কাজে ব্যবহার করছে। আর আমরা করছি নিজেদের ক্ষতিতে।
আমাদের বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কিন্তু আমরা এর সঠিক ব্যবহার করছি না। যে কাজ করি না কেন কাজের চেয়ে দূর্নীতি বেশি।
কেউ কোন দেশের জন্য ভাল কাজ করতে চাইলে তাকে পিছনে একশ জন মানুষ টেনে ধরবে।

কক্সবাজার যদি জাপান বা চীনের কোন অঞ্চল হতো তাহলে কি হতো ভাবতে পারেন। কিভাবে তাদের মেধা দিয়ে কক্সবাজারকে কি করে ফেলতো হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পযর্টন কেন্দ্র হতো। আমার পেপারে বা ইন্টারনেট র মাধ্যমে এর গল্প পড়তাম।
কিন্তু আমাদের কক্সবাজার নিয়ে কেউ গল্প করে না।

আমরা চাইলে আমাদের দেশ থেকে দূর্নীতি দূর করতে পারি। আমাদেরকে আগে নিজেকে বদলাতে হবে। আজ যারা দূর্নীতি করছে তাদের দূর্নীতির কুফল তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ভোগ করবে। অস্হিসারশূন্য একটি দেশ রেখে যাবেন।

আমাদের দেশে এমন একটা গ্রাম আছে, যে গ্রামটির ইতিহাসে কখনোই মারামারি হয়নি, গ্রামবাসি কখনো আদালতের পথে পা বাড়াই নি। এ যেন এক রুপকথার গ্রাম।
তাও আবার আমাদের দেশের গ্রাম। নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রাম, আয়তন ৫২৮ দশমিক ৪৬ কি.মি.।জনসংখ্যা সাড়ে তিন হাজার,শতভাগ শিক্ষিত।
১৯৩৫ সালে গঠিত হয় এ পরিষদ, ১৯৫৭ সালে গঠিত তাদের নিজস্ব সংবিধান। বিগত দু’শো বছরের ইতিহাসে কখনো পুলিশ গ্রামে ঢোকেনি, কোন মামলা আদালতে যায়নি। অসাধারণ সভ্য এ গ্রাম টি। তাদের কাজের ফলেই আজ গ্রামটি এত সভ্য, সুশৃঙ্খল।

এ গ্রাম থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি, আমরা চাইলে বাংলাদেশ কে সোনার বাংলা বানাতে পারি।আবার আমরা চাইলে এদেশকে ধংসব করে দিতে পারি।
স্বাস্থ্যবিভাগের দূর্নীতির কুফল আমরা ইতিমধ্যে ভোগ করা আরম্ভ করেছি। ধরে নিলাম আমরা নিজেদের বদলাবো না,এভাবে দূর্নীতি বাড়তে থাকবে। আগামী দশবছর পর আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে? দূর্নীতি বন্ধ না হলে এদেশে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। কোন এক দূর্নীতিবাজ বলেছিলো, এদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া নাকি সাবাইকে টাকা দিয়ে কেনা যায়। তিনি একাই যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।

আমাদের হাত, পা, মেধা, সব আছে, চিন্তা করার শক্তি আছে, প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। বিশ্বাস, সাহসকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য স্হির করি, তারপর নিরলস পরিশ্রম করি, দেশ স্বপ্নের সোনার বাংলা হয়ে ওঠবে।
অনেক তো হলো, চলুন এবার নিজেকে বদলাই, বদলে যাবে দেশ।

লেখক: আইনজীবি, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।