প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুঃ
সারাদেশের সাথে কক্সবাজারেও নমুনা পরীক্ষা চলছে। গত ২৪ মার্চ কক্সবাজারে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। মাস খানেকের ব্যবধানে সেই আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এই ২৪ জনের হিসাব এরকম- মহেশখালীতে ১০ জন, টেকনাফে ৪ জন, উখিয়াতে ৪ জন, চকরিয়াতে ৩ জন, সদর উপজেলায় ২ জন এবং রামুতে ১ জন।

কক্সবাজারের আট উপজেলার মধ্যে কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় এখনো কোন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়নি। ওই এলাকার বাসিন্দাদের নমুনা পরীক্ষা চলছে কিনা তা আমার জানা নেই।

এখন এই আভাস পরিষ্কার যে, এক মাসের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা যেহেতু ১ জন থেকে বেড়ে ২৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে, এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে আরো বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে নমুনা পরীক্ষার চলমান এ ধারা অব্যাহত রাখতেই হবে। কোনো বাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কেউ একজনের করোনা সনাক্ত হলে তারপর সেই বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের অন্যদেরকেও নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে অথবা আনা হল, ব্যাপারটা যেন এটুকুতেই আটকে না থাকে। নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম যাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়।

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কক্সবাজার জেলার মোট জনসংখ্যা ২২,৮৯,৯৯০ জন। তবে এই পরিসংখ্যান কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ছাড়া। ২২ লক্ষাধিক নাগরিকের মধ্যে মাত্র ২৪ জন করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আতংকিত হবার কিছুই নেই। এই সংখ্যা তো নিতান্তই মামুলি। আমাদের মধ্যে এমন ধারণা কিংবা হিসাব-নিকাশ যেন কাজ না করে। আমরা যদি আত্মসচেতন না হই, আমরা যদি নিজেকে নিজে ফাঁকি দিই, আমরা যদি বর্তমান পরিস্থিতির মাত্রা এবং আকার উপলব্দি না করি, আমরা যদি বর্তমান সীমিত সময়ের লকডাউন জীবনটাকে মেনে না নিই তাহলে এই আক্রান্তের সংখ্যা থর থর করে বাড়তে বেশি সময় লাগবেনা।

আমরা আতংকিত হবনা ঠিক আছে কিন্তু আমাদেরকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। আমরা যাতে কোনো অবস্থাতেই তথ্য গোপন না করি। স্বাস্থ্যবিধি, কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন, এসব কিছু শুধু শুধু অনাবশ্যক মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। করোনাভাইরাসের মত প্রাণঘাতী এবং সংক্রামক ব্যাধি থেকে বাঁচতেই এসব বিধি-নিষেধ আমাদের উপর আরোপ করা হয়েছে। গোটা বিশ্ব একই বিধি-নিষেধ মানতে বাধ্য হয়েছে। আপাতত এর কোনো বিকল্প উপায় নেই। এ ছোট কথাটি বুঝতে কারো বিশেষজ্ঞ কিংবা বুদ্ধিজীবি হওয়া লাগেনা। আমাদের একটু সচেতনতাবোধ, একটু ধৈর্য্য, একটু সহিষ্ণুতা এ যাত্রায় আমাদের বাঁচিয়ে দিতে পারে। আমরা চাইলেই অন্যকেও সংক্রমিত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারি। ব্যাপারটা এখন অনেকটা এমন ব্যক্তিগত হয়ে গেছে যে, ঘরে থাকবো নাকি কবরে থাকবো এই সিদ্ধান্ত এখন পুরোটাই আমার নিজের উপর নির্ভর করছে।

এই সংকট কোনো না কোনো সময় কেটে যাবে। আমরা সবাই আগের মত করেই বাঁচবো। এই দুঃসময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে আমাদের টিকে থাকতেই হবে। আসুন, ততদিন না হয় আমরা নিজেকে একটু মানিয়ে চলি।

গোটা দেশের মত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জন্যও একটা চ্যালেঞ্জিং সময় যাচ্ছে। জেলায় লকডাউন চলছে। তারউপর পবিত্র রমজান মাস। সনাক্ত হওয়া করোনা রোগীদের ব্যবস্থাপনা, নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম জারি রাখা, জেলার আইনশৃংখলা রক্ষা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, কর্মহীন তথা ঠেকে যাওয়া মানুষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা, বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সামলানো সহ বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলিয়ে যেতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে। এমতাবস্থায় যাদের জন্য এত আয়োজন, এত ত্যাগ, এত কষ্ট স্বীকার করা, সেই নাগরিকরাই যদি এগিয়ে না আসেন, এই সংকট উত্তরণে প্রশাসনকে সহযোগিতা না করেন, তাহলে আমাদের অবস্থা ভাল এর দিকে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। এ কথাটা আমাদের সবার মাথায় ঢুকিয়ে নিতে হবে। তাহলে সরকার এবং প্রশাসনের চাইতে লাভটা আমাদেরই বেশি হবে।

লেখকঃ সভাপতি, কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ। সম্পাদক, আমাদের রামু।