আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ:
টেকনাফ পৌরসভা যানজটের শহরে পরিনত হয়েছে। রোহিঙ্গাসহ অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে জনগণের দুর্ভোগের অন্ত নেই। একদিকে সড়কের উভয় পাশে অবৈধ স্থাপনা অপরদিকে বর্ষায় পানি জমে নোংরা অবস্থায় পরিণত হয়েছে। বাস টার্মিনাল থাকলেও এর ব্যবহার নেই।

সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের মূল কেন্দ্রকে নিয়ে ২০০০ সালে পৌরসভা গঠিত হয়। আয়তনের দিক থেকে পৌরসভা শহরটি অত্যান্ত ছোট। জনসংখ্যার তুলনায় পৌরসভাটি ছোট হলেও এর আধুনিকতায়নের জন্য কোন পরিকল্পনা এখনো পর্যন্ত হয়নি। অতীতের যে সমস্ত সড়ক, কালভাট, সেতু, হাটবাজার, মার্কেট ও ফুটপাথ এখনো বহাল তবিয়তে। ফলে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে যানজটও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সড়ক বৃদ্ধি ও প্রশস্থকরণ করা হচ্ছে না। এতে দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে সচেতনমহলের অভিমত।

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভা এলাকায় কক্সবাজার-টেকনাফ প্রধার সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন যানবাহন দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ লোকে গাড়ির যাত্রী ওঠানো-নামানোয় ব্যস্ত। কোনো কোনোটি যাত্রী তুলতে দাঁড়িয়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এসব সড়কে চলাচল করা সিএনজি চালিত অটোরিকশা, টমটম, মাহিন্দ্রা, জিপ ও মাইক্রোবাস সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। মনে হয় এটি কোন শহর নয়, বরং বাস টার্মিনাল। এ ছাড়া ফুটপাতে দুই শতাধিক ভাসমান দোকান রয়েছে। এসব কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ রুটের যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহন আটকে পড়ছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, টেকনাফ পৌরসভায় মোড় গুলোতে দিন দুপুরে ট্রাক থেকে মালামাল আনলোড করা হয় এবং বাস স্টেশন এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাস যাত্রী ওঠানামা করার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটের মূল কারণ প্র্রধান সড়কের পাশে বাস কাউন্টার, গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাতে দোকান। যদি মিনি বাস ও দুর পাল্লার বাসগুলো নাইট্যং পাড়ার টার্মিনালে নিয়ে গেলে কোন ধরনের যানজট হতো না। বিশেষ করে টমটম, সিএনজি ও মাহিনদ্র গাড়ী অতিষ্ট করে তুলেছে পৌরবাসীসহ আগত পর্যটকসহ পথচারীদের। এই যানজটের ফলে স্কুল ও অফিসগামীদের দূর্ভোগের অন্ত নেই। এছাড়াও বাস টার্মিনাল থাকা স্বত্ত্বেও এর যথাযথ ব্যবহার নেই। বড় বড় দুর পাল্লার বাসগুলো সরাসরি পৌর শহরে ঢুকে অবস্থান নেওয়ার ফলে যানজট সমস্যা আরো তীব্র আকার ধারন করে থাকে। ঢাকার দুর পাল্লার গাড়ীগুলো পৌর শহরের ষ্টেশনের সারাদিন থাকার ফলে পথচারীদের হাঁটার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটার সময় প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারীসহ শহরে আসা লোকজন। অনেক গাড়ীওয়ালার সাথে অনাকাংখিত ঝগড়ায় লিপ্ত হচ্ছে পথচারীরা। যানজট নিরসনে একজন ট্রাফিক থাকলেও অতিরিক্ত চাপের ফলে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। কয়েকবার বাস টার্মিনাল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কোন অদৃশ্য শক্তির থাবায় বার বার টার্মিনালটি ব্যবহার না করে শহরের ভিতর গাড়ী নিয়ে আসা হচ্ছে। এদিকে বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে পৌরসভার যানজট নিরসনে প্রায় ২০ একর জমির উপর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে নাইট্যংপাড়ায় একটি বাস টার্মিনাল স্থাপন করা হয়। স্থাপন হওয়ার পর পৌরসভা থেকে রিক্সা ব্যতিত সকল প্রকার যানবাহন টার্মিনালে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে যানজট মুক্ত হয়পৌরসভা। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত অনায়াসে পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে চলাচল ও কেনা কাটা করতে পারত। বিগত ৫/৬ পূর্বে হতে নবনির্মিত টার্মিনাল থেকে সকল প্রকার যানবাহন পৌরসভায় ঢুকে পড়ে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যা এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভার অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় সকল ফুটপাথ হকারদের দখলে। সড়কের উপর অবৈধ ভাবে হাটবাজার, মার্কেট ইত্যাদি গড়ে উঠার কারণে সড়ক গুলো সরু হয়ে পড়েছে। একটি ছোট যানবাহন আরেকটি ছোট যানকে সাইট দিতে পারেনা। সাইট দিতে গেলেই তীব্র যানজটে পরিনত হয়। সড়ক গুলো সবই ্ওয়ান ওয়ে হওয়াই যানজটের আরেক মুল কারণ। এতে মুমূর্ষ রোগী, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী, চাকুরী জীবিগণ যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনা বলে পৌরবাসীরা জানিয়েছেন। পৌরসভার অধিকাংশ যানবাহনের বৈধ লাইসেন্স পত্র নেই। এ গুলো দেখার কোন লোকজনও নেই। ফলে দিন দিন অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানতে চাইলে টেকনাফ আল জামেয়া আল ইসলামীয়া মাদ্রাসার পরিচালক মুফতী মাওঃ কিফায়তুল্লাহ শফিক জানান, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টেকনাফ পৌরসভাকে সাজাতে হবে। এটি একটি পর্যটন ও সীমান্ত এলাকা। এখানে দেশী বিদেশী লক্ষ লক্ষ পর্যটকের সমাগম ঘটে। পৌর শহরকে যানজট মুক্ত ও সৌন্দয্য মন্ডিত করতে হলে বাস টার্মিনাল ব্যবহার করতে হবে এবং টমটম, অটোরিক্সা ও সিএনজিসহ ছোট ছোট যানবহনের জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্ধ দিলে যানজট নিরসন সম্ভব। শুধু মেয়র একার পক্ষে যানজট নিরসন সম্ভবপর নয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলের আন্তরিক অবশ্যক। এব্যাপারে পৌর মেয়র হাজী মোঃ ইসলাম জানান, যানজট নিরসনের জন্য সড়কের উভয় পার্শ্বের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও পরের দিন একই অবস্থায় ফিরে আসে। এবিষয়ে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভায় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বাস, ট্রাক মালিক সমিতি ও গাড়ী মালিকদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদেরকে বাস টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। তবে তাদেরও কয়েকটি দাবী রযেছে। তম্মধ্যে বিদ্যুৎ, পানি, টয়লেট, দারোয়ান ও অফিসের ব্যবস্থা করে দেওয়া। এছাড়াও সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাথে আলোচনা হচ্ছে। যেন, টার্মিনালটি পৌরসভাকে হস্থান্তর করে দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ছোট একটি শহরের প্রতিদিনি ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষের আনাগোনা। এছাড়াও পৌরসভায় ১৫ হাজার ভোটারে ৫০ হাজার জনসংখ্যা হলেও রোহিঙ্গাদের অতিরিক্ত চাপ পৌরসভাকে সহ্য করতে হচ্ছে। তাছাড়াও ৬টি ইউনিয়নের মানুষ টেকনাফ পৌরসভায় প্রতিনিয়ত আসা যাওয়ার ফলে যান চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪০ ফুট সড়কে এতো গাড়ীর চলাচল যানজট সৃষ্টি অবশ্যই। এক্ষেত্রে সকলের ভাল পরামর্শ গ্রহনযোগ্য হবে এবং বাস, ট্রাক ও দুরপাল্লার গাড়ীগুলো অতিসত্ত্বর টার্মিনালে হস্তান্তরের মাধ্যমে একটি মডেল টেকনাফ পৌরসভা উপহার দেওয়া হবে। তাছাড়াও মেয়র হাজী মোঃ ইসলাম বলেন, স্টেশনের জামে মসজিদের সামনের জলাবদ্ধতা নিরসনের শিগগিরই নালার ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে জমি সংক্রান্ত জঠিলতার কারণে নালাটির কাজ শুরু করতে আপাতত দেরী হচ্ছে।