নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম নগরীতে আবারও উন্মুক্ত নালায় পড়ে প্রাণ হারাল এক শিশু। বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর ৩টার দিকে হালিশহর আনন্দপুর এলাকায় উন্মুক্ত নালায় পড়ে মারা যায় তিন বছর বয়সী শিশু মরিয়ম।

স্থানীয়রা জানান, বাড়ির পাশে একটি দোকানে যাওয়ার সময় মরিয়ম এমন একটি নালার ওপর পা রাখে, যার ঢাকনা ছিল না। ওপরের জমে থাকা পানির কারণে সেটি যে একটি খোলা নালা—তা বোঝার উপায় ছিল না। মুহূর্তেই সে পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে খুঁজতে থাকেন। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে মরিয়মকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, খবর পাওয়ার পর আগ্রাবাদ স্টেশন থেকে ডুবুরি দল পাঠানো হয়। তারা দ্রুত উদ্ধার করলেও শিশুটিকে আর বাঁচানো যায়নি।

চট্টগ্রাম নগরীতে উন্মুক্ত নালা ও খালে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সাল থেকে একের পর এক শিশু, তরুণ ও সাধারণ নাগরিক এই ঝুঁকির শিকার হলেও দৃশ্যমান কোনো প্রতিকার নেই। নির্মাণাধীন বা সংস্কারাধীন ড্রেনগুলোতে স্ল্যাব থাকে না, সাইনবোর্ড বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না থাকায় পথচারীরা প্রায়ই বিপদে পড়েন।

নালায় পড়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবারই দায় অস্বীকার করে একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড—সবাই শুধু দোষারোপ করে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, সুপারিশও আসে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বারবার অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। শিশু মরিয়মের মৃত্যুর পর তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ একজন মরিয়ম, কাল আরেকজন—এভাবে কি চলতে থাকবে?

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক বলেন, নগরপরিকল্পনায় জননিরাপত্তা আজ হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা ও জবাবদিহির অভাবেই এসব মৃত্যু থেমে নেই। জনস্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।