সিবিএন ডেস্ক ;
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারের জারি করা ৫৮ দিনের নিষেধাজনার ২৯ দিন অতিবাহিত হলেও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার ৬৩ হাজার ১৯৩ জন নিবন্ধিত জেলে এখনও পর্যন্ত ভিজিএফের (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) বরাদ্দকৃত চাল পাননি। ফলে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে এসব জেলে পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জেলার বিভিন্ন জেলে পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিবার চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে। অনেক পরিবারে দিনে মাত্র একবেলা খাবার জুটছে। কেউ কেউ অলস সময় পার করছেন, কেউবা সাময়িক পেশা বদলে আয়-রোজগারের চেষ্টা করছেন।
সরকার গত ১৫ এপ্রিল থেকে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীতে ৫৮ দিনের জন্য মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি নিবন্ধিত জেলেকে ৮৬ কেজি চাল দেওয়ার কথা—প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি, দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কেজি। তবে ১৪ মে পর্যন্ত কক্সবাজারের কোনো উপজেলাতেই সেই চাল বিতরণ শুরু হয়নি।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও জালিয়াপাড়ার জেলে রহমান আজহার ও মুজিব উল্লাহ জানান, মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির গুলিবর্ষণ ও অপহরণের আশঙ্কায় তারা গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে সাগরে যেতে পারছেন না। ইতোমধ্যে শতাধিক জেলে অপহরণের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল সেন্টমার্টিন উপকূলে চারটি ফিশিং বোটসহ ২৩ জন মাঝিমাল্লাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় গোষ্ঠীটি।
টেকনাফ ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম জানান, বিজিবির তৎপরতায় অপহৃত অনেক জেলে ফিরলেও অনেকে এখনও নিখোঁজ। এসব পরিবার উৎকণ্ঠার পাশাপাশি সরকারি খাদ্য সহায়তা না পেয়ে হতাশায় ভুগছে।
শাহপরীর দ্বীপের ট্রলারমালিক আবদুল আমিন ও সাবরাং ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, দীর্ঘদিন মাছ ধরতে না পারায় জেলেরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। এখন আবার চাল না পাওয়ায় টেকনাফ উপজেলার অন্তত ১২ হাজার জেলে পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
মহেশখালী উপজেলার কুতুবজুম ইউনিয়নের জেলে রহিম উদ্দিন বলেন, চালের খোঁজে উপজেলা মৎস্য দপ্তরে গেলে জানানো হয় বরাদ্দ এখনও এসে পৌঁছায়নি। অথচ গত বছর নিষেধাজ্ঞা শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যেই চাল বিতরণ শুরু হয়েছিল। হোয়ানক, মাতারবাড়ী, বড় ও ছোট মহেশখালী, গোরকঘাটা, শাপলাপুর—সব ইউনিয়নের জেলেদের একই ভোগান্তি।
মহেশখালীতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৫,৮৩২ জন। কুতুবদিয়ায় ৯ হাজারের বেশি এবং চকরিয়া-পেকুয়ায় ২৩ হাজারের বেশি নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন—তাদের অনেকেই এখনও চাল পাননি।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলায় প্রায় ৬ হাজার ট্রলারে কর্মরত জেলে শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার আগের তিন মাসেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরতে পারেননি অনেকেই।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, “সরকারি বরাদ্দের চাল পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। হাতে এলেই দ্রুত বিতরণ শুরু হবে।”
চাল সরবরাহে এমন বিলম্ব হতদরিদ্র জেলে পরিবারগুলোর জীবনকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দ্রুত চাল পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জেলেরা ও সংশ্লিষ্টরা।