আব্দুস সালাম, টেকনাফ;

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী এলাকায় সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবকের নেতৃত্বে পরিচালিত মানবপাচারকারী চক্রের একটি গোপন আস্তানা থেকে ১৪ জন অপহৃত বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। উদ্ধারকৃতদের মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাচারের জন্য বিভিন্ন সময় অপহরণ করে সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ উপজেলার উত্তর লম্বরী এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়।

উদ্ধার হওয়া ১৪ জন হলেন: আকতার হোসেন (২২), সাইফুল ইসলাম (১৬), খায়ের হোসেন (১৮), মো. রশিদুল ইসলাম (১৯), মো. আয়াজ (১৮), মফিদুল রহমান (১৫), শাহারিয়া মোহাম্মদ (১৯), মো. মোজাহের (২৮), মো. কায়ছার (২৩), লুৎফর রহমান কাজল (১৭), সিরাজুল হক (২৪), মো. আবু তালেব (৩৬), মো. কাসেম (২৬) এবং মহিউদ্দীন বাবু (১৭)। তারা সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।

বিজিবি কর্মকর্তা জানান, এই মানবপাচার চক্রের নেতৃত্বে ছিল লেঙ্গুরবিল এলাকার মৃত হাফেজ আহমদের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৩৯)। তাকে আটকের লক্ষ্যে গত ২৪ এপ্রিল গভীর সাগরে একটি অভিযান চালানো হয়। তবে পাচারকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও কয়েকজন ভুক্তভোগীকে সেদিন উদ্ধার করা হয়েছিল।

এরপর উদ্ধার হওয়াদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মেরিন ড্রাইভ ও দমদমিয়া এলাকায় একাধিক অভিযান চালানো হয়। এতে নিশ্চিত হওয়া যায়, লম্বরী এলাকায় আরও কিছু বাংলাদেশিকে অপহরণ করে গোপন স্থানে আটকে রাখা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগীরা জানান, পাচারকারীরা দালালদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের টেকনাফে ডেকে আনে। এরপর সুযোগ বুঝে অপহরণ করে দুর্গম স্থানে আটকে রাখা হয়। পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও পাঠানো হতো।

মোহাম্মদ কাসেম ও মহিউদ্দীন নামে দুজন জানান, “আমরা ইনানীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এক সিএনজি চালকের প্রলোভনে টেকনাফে গেলে আমাদের অপহরণ করে একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও অনেককে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। আমাদের মারধর করে ভিডিও পাঠিয়ে পরিবার থেকে এক লাখ টাকা করে আদায় করা হয়। ১৮ দিন ধরে জিম্মি রাখা হয়। পরে বিজিবি এসে আমাদের উদ্ধার করে। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, “বিজিবি ১৪ জনকে একটি তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করেছেন বলে শুনেছি। পুলিশে হস্তান্তর করা হলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”