নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা পরিচয়ে একটি হেফজখানা ও এতিমখানায় সংঘটিত ডাকাতির আট মাস অতিক্রান্ত হলেও মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা লুট হলেও এখনো পর্যন্ত কিছুই উদ্ধার হয়নি।

বেশিরভাগ আসামি জামিনে মুক্ত বা পলাতক থাকলেও তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা নেই—যা তদন্তের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে।

২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাত, চরপাথরঘাটার খোয়াজনগরে অবস্থিত ‘আলত্বাফিয়া ইয়াছিনিয়া আল-এজাজ ইন্টারন্যাশনাল হেফজ ও এতিমখানা’-তে সেনা গোয়েন্দা পরিচয়ে প্রবেশ করে তল্লাশির নামে একটি লকার ও ওয়ারড্রব ভেঙে প্রায় ৩ লাখ টাকা ও ৬ হাজার দিরহাম-রিয়াল লুট করা হয়। জনতার সহায়তায় চারজনকে আটক করা হয়। পরদিন হেফজখানার হিসাবরক্ষক কর্ণফুলী থানায় মামলা করেন।

মামলার ৯ আসামির একজন ছিলেন কর্মরত সেনাসদস্য, বাকিরা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য, সাংবাদিক পরিচয়ধারী ও শ্রমিক নেতা। অভিযুক্ত সেনাসদস্য সার্জেন্ট মো. সুহেল আনোয়ার বীর সেনা আইনে ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে বিচারপ্রাপ্ত হন। দোষ স্বীকারের পর তিনি দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, চাকরিচ্যুতি ও পদাবনতির সাজা পান এবং বর্তমানে অসামরিক কারাগারে আছেন।

অন্যদিকে, বাকি আসামিদের অধিকাংশই এখন জামিনে মুক্ত বা পলাতক। বিদ্যুৎ কান্তি দে কারাগারে, মো. শফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তার টিটু হাইকোর্টের জামিনে, সুমন কান্তি দে চার্জশিট পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালত থেকে জামিনে, সৈনিক রুবেল আনোয়ার সেনা হেফাজতে এবং সৈনিক জামাল এখনও পলাতক।

তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ জানান, “তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।”

কিন্তু আট মাসেও দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় স্থানীয়রা মনে করছেন, পুলিশ হয় নিস্ক্রিয়, নয়তো প্রভাবশালী মহলের চাপে নতিস্বীকার করেছে।

সামরিক অভিযুক্তের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার ও শাস্তি কার্যকর হলেও বেসামরিক আসামিদের বিষয়ে পুলিশের ধীরগতিকে অনেকেই বিচারিক বৈষম্য হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত এ ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্বচ্ছতা ও গতি না থাকায় জনমনে গভীর আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, লুট হওয়া অর্থ উদ্ধার ও সকল আসামিকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।