নিজস্ব প্রতিবেদক:
রূপ বদলাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। যারা গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন নেতাদের ক্ষমতার দাপট ব্যবহার করে এলাকায় মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, ছিনতাই থেকে শুরু করে হত্যার মত বড় অপরাধ করতো তারা এখন সরকার পরিবর্তনের পরে বিএনপি এবং জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আবার অনেকে বিএনপি বা জামায়াতের নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে চলে গেছে। ফলে তারা আবারো রূপ পাল্টিয়ে অপরাধের সম্রাজ্য ধরে রাখতে মরিয়ে হয়ে উঠেছে।
৮ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়া ঝিলংজা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. নাছির উদ্দীনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশায় প্রশাসন। আওয়ামী লীগের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে তার অনেক ছবি রয়েছে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্যতা দেখা গেছে। আবার জামায়াতের পক্ষেও তার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখা যায়। এরকম বহুরূপী মানুষগুলো বিপজ্জনক বলে মন্তব্য সচেতন মহলের।
সম্প্রতি খুরুশকুল ইউনিয়নের শীর্ষ সন্ত্রাসী ২৬ টি মামলার আসামি মামুনকে গ্রেফতারের পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে যুবদল নেতা হিসাবে অনেকে মুক্তি দাবি করা হয়।
খুরুশকুল ইউনিয়নের কাউয়ারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম জানান, পুরো খুরুশকুলের সবচেয়ে বড় শীর্ষ সন্ত্রাসী হচ্ছে কাউয়ারপাড়া এলাকার মৃত নুরুল আলম বহদ্দারের ছেলে মামুন। তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, হত্যা, জমি দখল, মারামারি এবং নারী নির্যাতনসহ ২৬ টি মামলা আছে। একই সাথে তার আপন ছোট ভাই কায়সারের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, নারী নির্যাতন, জমি দখলসহ ২১ টি মামলার তথ্য মিলেছে। তারা মূলত গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেলা ও খুরুশকুল আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবহার হতো। মামুন, কায়সার গ্রুপে আরো ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাকের আলম বহদ্দার, কথিত মৌলভী জুবায়ের, আমির হোসেন, বহুবার ইয়াবাসহ আটক হওয়া মোস্তাক।
একই সাথে খুরুশকুলের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যানরা লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করতো সন্ত্রাসীদের।
৫ আগষ্টের পরে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেকে এলাকা থেকে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সমাজ সেবক আবুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে, মামুন কায়সার, শাকের আলম বহদ্দার, জুবায়েরদের অত্যাচারে মানুষ শান্তিতে থাকতে পারেনি। কেউ জমি বিক্রি করা তো দূরের কথা, বাড়ি তৈরি করতেই চাঁদা দিতে হয়েছে। বিচারের নামে অন্তত কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। কোন কিছু হলেই তারা মুজিব বদ্দার কথা বলতো। আবার প্রায় সময় দেখা যেত, জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাদের বাড়িতে আসতো, তাদের কথায় এলাকার মানুষকে ফোন করে হুমকি ধমকি দিত। অথবা পুলিশ দিয়ে হয়রানী করতো। এখন দেখছি তারা অনেকেই বিএনপি অথবা জামায়াত নেতা হয়ে যাচ্ছে। গত কিছুদিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদের আগমন উপলক্ষে এলাকায় মামুনকে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে। বহুরূপী মামুন মিছিল করেছে বিএনপির জন্য। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন চেয়ারম্যানসহ স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের সঙ্গে অনেক ছবি রয়েছে। তার এমন পল্টি বাজিতে এলাকার মানুষ হতবাক।
এ সমস্ত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ ব্যপারে খুরুশকুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাবেক চেযারম্যান আমানুল হক বলেন, যারা অপরাধী তারা সবসময় অপরাধী। তাদের কোন দল নেই। খুরুশকুলে বিগত সময়ে যারা বিএনপি করেনি তাদের কোন ভাবেই দলীয় সুবিধা পাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
এদিকে, স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করতে শতশত অস্ত্রধারী লোক ভাড়া করেন খুরুশকুলের যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলম বহদ্দার, দিদারুল আলমসহ দলীয় ক্যাডার বাহিনী। এসব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায়নার দাবি এলাকাবাসীর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ওসি ফয়জুল আজিম নোমান সিবিএনকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা গুলি চালিয়েছে, নাশকতা করেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। একে একে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বেশ কিছু চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে। তবে তালিকাভুক্ত অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেফতারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।