আব্দুস সালাম,টেকনাফ (কক্সবাজার) :
কক্সবাজারের টেকনাফে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচিতে নাম দেওয়ার কথা বলে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাফর আলম প্রকাশ এসকে জাফর নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

জানা যায়,মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় অসচ্ছল, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারীরা দুই বছর মেয়াদে (২০২৩-২৪) বিনামূল্যে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। শুধু খাদ্য সহায়তাই নয়, উপকারভোগী প্রত্যেকের নিজস্ব একটি ব্যাংক হিসাবও খুলে দিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। চাল নেয়ার সময় এই অ্যাকাউন্টে ২২০ টাকা জমা করছেন উপকারভোগীরা। যা হবে তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রাথমিক মূলধন গঠন।

শুধু ভিডাব্লিউবি নয়,জন্মসনদ করে দেবে বলেও জাহেদা নামের এক মহিলার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে জাফরের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত জাফর টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের আলী আকবর পাড়ার বাসিন্দা মৃত হাজ্বী বদিউজ্জামানের ছেলে ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎসজীবী জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে রয়েছেন ।

এভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতানোর বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য বশির আহমদ ও অভিযুক্ত জাফর দু’জনই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, জাফর আলম বিভিন্ন সময় সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে সরকারি অনুদানের কার্ড করে দেবেন বলে টাকা হাতিয়ে নেন।
স্থানীয় কয়েকজন জেলে জানান,তাদেরকে উপজেলার মৎস্য অফিস থেকে জেলে ভাতার তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করে দেবেন এবং পরবর্তীতে জেলে কার্ড হাতে পেলে সরকারিভাবে জেলে ভাতা পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রায় অর্ধ-শতাধিক জেলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন জাফর । মূলত মৎস্য সমিতির নেতার পরিচয়ে তিনি এসব প্রতারণা করছেন বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।

রোকেয়া বেগম,নার্গিস আক্তার,মিনারা আক্তার, ফাতেমা আক্তার,সাহারা ও মমতাজ মিয়াসহ অনেকের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেন।
ভূক্তভোগী মমতাজ মিয়া বলেন,চালের কার্ড দিবে বলে প্রতারণা করে তাঁর কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে জাফর । যখন চালের কার্ড দেবে তখন আরও ১হাজার করে দিতে -এমনটি বলেছেন বলেও ভূক্তভোগী মমতাজ বেগম জানান।

নাজমা আক্তার নামে এক ভূক্তভোগী মহিলা জানান, ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচিতে চারজনের নাম উঠানোর কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা দেওয়ার পর প্রায় ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এসকে জাফর তাদেরকে ভিডব্লিউবি’র কার্ড করে দিতে পারেননি।
পরে উক্ত মহিলা থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ করে দেবেন বলেও ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

একই কায়েদায় জাহেদা নামে আরেকজন মহিলার কাছ থেকেও দুইটি ভিডব্লিউবি’র বিনামূল্যে ৩০ কেজি চালের কার্ড করার অজুহাতে ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
অবশেষে চালের কার্ড না পেয়ে ভূক্তভোগীরা হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলীর নিটক অভিযোগ করেন। এরপর থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতানোর বিষয়টি জনসম্মুখে চলে আসে।

অভিযুক্ত জাফর আলমের কাছে অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেন,পরে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে অন্যজনকে দিয়েছে বলে জানান। আগামি এক সপ্তাহ বা তিনদিনের মধ্যে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত দেবেন বলেও এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি।

হ্নীলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার বশির আহমদ জানান,আমি (জাফর) তাকে জিজ্ঞেস করেছি, টাকা নেওয়ার কথা সে আমাকে স্বীকার করেছে। সে নাকি টাকাগুলো অন্য আরেকজনকে নিয়ে দিয়েছে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান,ভূক্তভোগীরা বিষয়টি আমাকে জানালে, আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জান জানান, ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।