রামু প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের রামুতে মায়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা অসংখ্য গরু উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে রামু থানা পুলিশ। পুলিশের নীরব ও রহস্যজনক ভ‚মিকার ফলে রামু সড়ক-উপসড়ক ও পাহাড়ী এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত বানের পানির মতো পাচার হচ্ছে মায়ানমার থেকে আনা গরু।
রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাজেদুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টহল দল সোমবার, ২৪ এপ্রিল দুপরে সড়কে দাঁড়িয়ে গরু চোরাকারবারিদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে নিচ্ছিলেন ঘুষ। ওইসময় পুলিশের ঘুষ নেয়ার একটি ভিডিও ও একাধিক ছবি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা নিয়ে চলছে তোলপাড়।
প্রতিবেদকের হাতে থাকা এ ভিডিওতে দেখা গেছে- রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা মুরাপাড়া রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের মোড়ে রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাজেদুল হক সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালনে দেখা গেছে। এসময় ওই সড়ক দিয়ে মায়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা গরুর প্রতি গাড়ি থেকেই ঘুষ নিচ্ছিলো সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ। ভিডিওতে দেখা যায় গরুর গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তি রামু থানা পুলিশের একজন কনস্টেবলকে টাকা দিচ্ছেন। তার পাশেই ছিলেন এসআই আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাজেদুল হক। টাকা নেয়ার পর এসআই মাজেদুল হক গরুর গাড়িগুলোকে দ্রæত চলে যাওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা যায়। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওই দলটি সেখান থেকে সটকে পড়েন। ওইদিন সকাল থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু বোঝাই মিনিট্রাক (পিকআপ) এ সড়ক হয়ে রামুতে আসতে দেখা গেছে।
দিনদুপুরে পুলিশের এমন ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন বলেন- ভিডিও দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাজেদুলের ডিউটি ছিলো। এখানে পেশাদারিত্বের সাথে কারো দায় আমি নিবো না। যদি এরকম হয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গরু চোরাচালান রোধে পুলিশের যেখানে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ সেখানে দিনদুপুরে সড়কে দাঁড়িয়ে ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন- রামু উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম। তিনি বলেন, যেখানে কিছুদিন আগেই গরু চোরাচালানের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে, সেখানে পুলিশের উল্টো ঘুষ নেওয়া হতাশাজনক। সরকারের উচিৎ অনতিবিলম্বে গরু চোরাচালান রোধ এবং ঘুষ বাণিজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক প্রদক্ষেপ নেয়া।
এ ব্যাপারে রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাজেদুল হক ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জানা গেছে- রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাজেদুল হক রামু থানায় যোগদানের পর থেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। উপজেলা শীর্ষ ইয়াবাকারবারিদের সাথে তার রয়েছে সখ্যতা। সম্প্রতি রামুর এক প্রতিবন্ধী সাংস্কৃতিক কর্মী ছিনতাই হওয়া সাউন্ড সিষ্টেমের মালামাল উদ্ধারে গিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে উল্টো চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন। ছিনতাইয়ের এ ঘটনায় জড়িত গাড়ি চালককে থানায় ধরে এনে জিজ্ঞাষাবাদে চালক ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করার পরও রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দেন এসআই মাজেদ। পরে প্রতিবন্ধী যুবকটি ফোন করলে এসআই মাজেদ তাকে জানান- ‘আমি জাহান্নামে আছি’।
উল্লখ্য যে বিগত ৬ মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্টের মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার গরু পাচার হচ্ছে রামু উপজেলাসহ সারাদেশে। কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমান্তবর্তী কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গরুর জন্য দেওয়া একটি প্রত্যয়ন পত্র ভাইরাল হয়। এর আগে ৮ এপ্রিল রামু উপজেলার কাউয়ারখোপে বিজিবির সাথে গরু চোরাকারবারিদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে স্থানীয় দোকান কর্মচারি প্রাণ হারান। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে গরু চোরাচালানকে ঘিরে পথে পথে গরু ডাকাতি, লুট, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনায় রামুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনিত হয়েছে।
রামুতে পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যে নির্বিঘ্নে চলছে গরু পাচার, ভিডিও ভাইরাল
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
