সৈয়দ তানবীর মাহমুদ খোন্দকার

পারিবারিক শিক্ষা প্রত্যেক মানুষের জন্য জরুরী। এটাই বুনিয়াদি শিক্ষা। যার পারিবারিক শিক্ষার ভিত যত উন্নত কর্মক্ষেত্রে সে তত সফল। শিশুর পারিবারিক শিক্ষা তাকে উন্নত সংস্কৃতির দিকে ধাবিত করে। যে পরিবারে শিশুকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয় সে শিশুটির কথাবার্তা, আচার- আচরণ ও শৃঙ্খলায় ঈর্ষণীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অন‍্য শিশুদের চেয়ে একটু ভিন্ন হয়। রাজনীতির উৎপত্তি পরিবার হতে। একজন শিশু পরিবারের সদস‍্য হতে এটা শিখে। কেননা শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। পরিবারের দেয়া শিক্ষা শিশুরা কখনো ভুলে না। শিক্ষা জীবনের প্রথম পাঠ তার মগজে থেকে যায়। আর বাবা মার শিক্ষা ধর্মীয় গ্রন্থের মত। মহাত্মা গান্ধী বলেন- প্রতিটি বাড়িই এক একটা বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ প্রত‍্যকে বাবা-মা ই একজন প্রকৃত শিক্ষক। শিশুরা কাদা মাটির মত। ছোটবেলায় তাকে যে শিক্ষা দেয়া হয় বড় হয়ে উঠে সেই মানসিকতায়। এপিজে কালাম বলেন, তিন শ্রেণির মানুষ সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে। যেমন, বাবা-মা ও শিক্ষক (প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের)। একদিন শিশুরা ও পরিবর্তন আনবে যদি তার বাবা-মা তাকে সেভাবেই গড়ে তুলে। Change comes to those who know what they want. এপিজে আরো বলেন, নৈতিকতাবিহীন শিক্ষা তলাবিহীন গ্লাসের মত। তলাবিহীন গ্লাসে পানি ঢাললে ও গ্লাসটি ভর্তি হবে না। ঠিক একইভাবে নৈতিকতাবিহীন শিক্ষা কখনোই সুনাগরিক অথবা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। নৈতিক শিক্ষা সুনাগরিক হবার পূর্বশর্ত। শিশুরা সুনাগরিক হতে পারলেই সুশাসন নিশ্চিত হবে।

২০০৪ সালে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের একজন সাবেক সচিব সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। সমাপনী ডিনারে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আর বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এক টেবিলে খেতে বসেছিলেন। উল্লেখ্য আইনের শাসন মানে এবং সিভিল সার্ভিসের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর এশিয়া মহাদেশের সেরা দেশ। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র সচিব কে জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনারা এ অবস্থায় পৌঁছালেন কিভাবে? উত্তরে তিনি যা বলেছিলেন, তাঁর মূল উপাদান ছিল দুটি –

ক) পারিবারিক সুশিক্ষা।

খ) রাষ্ট্রের সর্বস্তরে আইনের শাসন।

সেদেশে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার সামনে প্রদর্শিত সকল কথন, কর্ম, চলনসহ সব কিছুতেই থাকে শুদ্ধাচার চর্চা। ফলে তার মগজে খারাপ কিছু ঢুকার অবকাশ থাকে না। তার স্মৃতিতে জমা হয় উত্তম চর্চার নজির।

প্রিয় অভিভাবক / বন্ধুরা,

আমরা চাইলে কি আমাদের সন্তানদের এই ধরনের শিক্ষা দিতে পারিনা। আমরা চাইলে একটা বৈষম‍্যহীন সমাজ ও সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারিনা? আসলে আমরা সব পারি। শুধুমাত্র বিবেকটাকে জাগ্রত করলে হয়। সোনার বাংলা তথা বৈষম‍্যহীন সমাজ গড়তে হলে সুনাগরিক সৃষ্টি করতে হবে। সুনাগরিক গড়তে হলে ছোটবেলায় তাকে ভালো শিক্ষা দিতে হবে। প্রত‍্যেেকর বাবা মায়ের উচিত তাকে ছোটবেলায় সবকিছুতে শুদ্ধাচার চর্চা করা। ছোটবেলার শিক্ষা মগজে দীর্ঘদিন থেকে যায়। হয়তো একজন দুজন ভিন্ন পথে যেতে পারে। আপনার আমার নৈতিক দায়িত্ব হল ছোটবেলায় শিশুটি কে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া। বড় হয়ে সে তা ফলো করুক আর না করুক সেটার দায় তার, আপনার নয়। এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন এর বিচার হতে বেঁচে গেলেন। মনে রাখবেন একদিন আমাদেরকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।

শিশুকে শিক্ষা দানের এক্ষেত্রে আমার কিছু পরামর্শ রয়েছে। যেমন-

ক) শিশুকে নৈতিক শিক্ষা দিন। স্কুলে শিক্ষকদের কথা মেনে চলে কিনা, শ্রেণিনেতার আদেশ মেনে চলে কিনা জিজ্ঞেস করুন। বিশেষত পথে মুরব্বি দেখলে সালাম করে কিনা যাচাই করুন।

খ) শিশুটি কে ভালো সঙ্গীর সাথেই মিশতে দিন। ভালো সঙ্গী জীবনকে বদলে দেয়।

গ) শিশুর সামনে কারো সমালোচনা করবেন না। কারণ শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। এটা যে মন্দ কাজ তাকে বুঝিয়ে বলুন।

ঘ) Don’t do injustice to anybody. তাকে এ শিক্ষাটাই দিন।

ঙ) সাপকে লম্বা ও ব‍্যাঙকে বেটে না বলতে বলুন।

চ) ছোটবেলায় তাকে মহৎ ব‍্যক্তিদের জীবনী পড়তে দিন।

ছ) স্কুলে বন্ধুদের সাথে ভালো আচরণ করতে বলুন। তার আগে বাবা মাকে তার সাথে মার্জিত আচরণে কথা বলতে হবে।

জ) শিশুর মানসিক বিকাশের জন‍্য খেলাধুলা, সাহিত্যচর্চা ও গানের ব‍্যবস্থা করুন।

ঝ) সবসময় নিজের দোষ আর অন্যের গুণ দেখতে শিক্ষা দিন।

ঞ) যদি বণ্টনকারী হয় অন্যের প্লেটে বড় অংশটা আর ছোট অংশটা নিজের প্লেটে নেবার শিক্ষাটাই দিন।

চ) There is a beautiful side to the protest- তাকে বারবার এটা শিখান। আর যখনই সে এটা শিখবে তখন সে স্বার্থক মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে।

ছ) কাউকে ওয়াদা দেবার আগে তাকে কয়েকবার ভাবতে বলুন। আর কাউকে ওয়াদা দিলে তা শত প্রতিকূলতার মাঝেও তা রক্ষা করতে বলুন। কারণ ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফেক এর লক্ষণ।

মোটকথা- Charity begins at home. A child learns love-hate, politeness, morality, modesty, hospitality, socialness-unsocialness, sincerity, collaboration and negligence from the family. The family is the first school of a child. The family is one of the oldest institutions in the world and larger than any other institution. Parents are the most popular teachers in the family. The education given by the family affects the working life. So its importance can’t be described in a word.

লেখক : সৈয়দ তানবীর মাহমুদ খোন্দকার ,বি.এস.এস (সম্মান) এম.এস.এস ( রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ,সহকারি শিক্ষক ,মধ‍্য রাজাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়।