মোঃ কাউছার উদ্দীন শরীফ, ঈদগাঁওঃ

কক্সবাজারের ঈদগাঁও বাস স্টশনে মহা সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে সিএনজি, টমটম, মাহিন্দ্রা, এবং যাত্রীবাহী বাস গাড়ী পার্কিং করা হয়েছে। এতে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ পথচারীসহ শ্রমিক-কর্মচারীরা। অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারণে অবৈধ পার্কিং বন্ধে কর্তৃপক্ষের উদাসীন।

জানা যায়, উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম সড়কপথ কক্সবাজার- চট্রগ্রাম মহাসড়ক। উক্ত মহাসড়কের ঈদগাঁও উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁও বাস স্টেশনের শুরু লাল ব্রিজ হইতে পেট্রলপাম পর্যন্ত রয়েছে বিভিন্ন গাড়ি পার্কিং।অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা না গেলে যানজট নিরসন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।প্রয়োজনের চেয়ে ছোট এই বাস-স্টেশনে যেসব গাড়ির অফিস রয়েছে, মাইক্রোবাস, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, টমটম, বারো আওলিয়া সার্ভিস, আলিরাজ পরিবহন, ঈদগাও লাইন, সী-লাইন, অটো রিকসা, ডাম্পার, ছাড়পোকা, হিল লাইনসহ দুর পাল্লার ও স্বল্প দুরত্বের ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহনের অবৈধ কাউন্টার ও অস্থায়ী পার্কিং স্টেশন। এসব গাড়ি নিদৃষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা নেই। অপরদিকে বাজারের গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল পয়েন্ট ঈদগাঁও বাসষ্টেশন, ডিসি রোড, নিউ মার্কেট, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকা, জালালাবাদ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টারের পার্শ্ববর্তী এলাকার চৌফলদন্ডী জীপ ষ্টেশন, বঙ্কিম বাজার, বাঁশঘাটা রোড, শহীদ মিনার এলাকা, চাউল বাজার, তরকারী বাজার, মাছ বাজার, বস্ত্রবিপনী, মরিচ বাজার, সুপারির বাজার, হাজী মার্কেট, বেদার শপিং কমপ্লেক্স এলাকা, জুয়েলারী পল্লীসহ সবখানেই নৈরাজ্যকর অবস্থা। ফলে একদিকে যেমন যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে তেমনি বিঘিœত হচ্ছে পথচারী চলাচল। প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঈদগাঁও বাসষ্টেশনের আরকান সড়ক এবং ডিসি রোড়ের সংযোগস্থলে যাত্রী ছাউনী ও দুরপল্ল¬ার বাস কাউন্টারগুলোর অবস্থান হওয়ার কারণে ওই স্থানে যাত্রী উঠানামা করাতে গিয়ে বাসগুলো থামালে বন্ধ হয়ে যায় ডিসি রোডের যান চলাচল। ফলে আরেকান রোডের দু’দিকে এবং ডিসি রোডগামীর যানসমূহের মধ্যে লেগে যায় দীর্ঘ যানজট। নিউ মার্কেট এলাকায় নির্মিতব্য বহুতলবিশিষ্ট অত্যাধুনিক কবিরাজ সিটি সেন্টারের সিড়ি রাস্তার উপর হওয়ায় পথচারী, স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধারণের পায়ে চলার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। নিরুপায় পথচারী ফুটপাতের পরিবর্তে ব্যবহার করছে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যভাগ। যে কারণে যান চলাচল যেমন বিঘিœত হচ্ছে তেমনি ঘটছে মারাত্মক দূর্ঘটনাও। অবৈধদখল এবং অব্যবস্থাপনার একই চিত্র ঈদগাঁও বাজারের সবখানেই। এ ছাড়া সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক (টমটম),সিএনজি যাত্রীবাহী বাস ও রিক্সার জন্য কোথাও কোন পার্কিং না থাকায় যত্রতত্র পার্কিয়েংর ফলে বাড়ছে জনদূর্ভোগ। এছাড়াও পণ্যপরিবহন ও পণ্যখালাসের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন ও সময়সূচী না থাকার কারণে পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যন, বাজারে ঢুকে পুরো রাস্তায় দখল করে। পণ্যখালাস করে ওই সকল যানবাহন স্থান ত্যাগ না করা পর্যন্ত দীর্ঘসময় ধরে সৃষ্টি হয় যানজট। আশংকাজনক হারে নতুন নতুন অবৈধ টমটম, অটোরিক্সা, সিএনজি, প্রতিদিন রাস্তায় নামছে। এ সকল যানবাহনের কোনপ্রকার সংবিধিবদ্ধ অনুমোদন নাই। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, বেশিরভাগ অটোরিক্সা ও টমটম চালক ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল করলেও নেই কোন নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা। অন্যদিকে ফুটপাত বেদখলের ফলে প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে নানা দূর্ভোগ ঝুঁকি। এছাড়া ঈদগাহ কলেজ গেইট থেকে শুরু করে বাসষ্টেশন পর্যন্ত আরাকান সড়কের উভয় পাশে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে শতাধিক গাড়ী মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান। পায়ের চলাচলের কোন পথ নেই বললে চলে। ঈদগাঁও বাজার এবং তৎসংশি¬ষ্ট এলাকার পরিবহণ ব্যবস্থা যানজট নিরসন ও পথচারী পারাপার নির্বিঘœ করতে অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতন মহল।

পথচারী কামাল জানান, ঈদগাঁও বাস স্টেশন এবং বাজারে অতিরিক্ত টমটম এবং অটোরিকশার কারণে নিয়মিত যানজট লেগে থাকে। এসব গাড়ির এলোপাতাড়ি চলাচল ও অপরিকল্পিত পার্কিং এর কারণে প্রতিদিন যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চরম বেকায়দায় রয়েছি আমাদের মতো পথচারীরা। এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

বাসের চালক সাহাব উদ্দীন জানান, আমরা রাস্তার এক পাশে বাস পার্কিং করে ট্রিপ মারার জন্য সিরিয়াল করে রেখেছি। রাস্তায় ছাড়া কোথায় রাখবো? আমরাও তা বুঝি, কিন্তু আমাদের বাস রাখার আর কোনো জায়গা নেই, তাই বাধ্য হয়েই এখানে রাখতে হয়েছে।

সিএনজি চালক বশির আলী জানান,গাড়িগুলো বেশি সময় সড়কে থাকেনা। লোকাল বাস খুব কমই থাকে সড়কের পাশে। কিন্তু দূরপাল্লার বাসগুলোর বেশির ভাগই সড়কে পার্কিং করা হয়। এতে সবার সমস্যায় পড়তে হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো আছেই, সেই সঙ্গে লেগে থাকে যানজট।প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সড়কে গাড়ি পার্কিং করেছি।

ঈদগাঁহ ট্রাফিক পুলিশের কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টর প্রাত্যশী দাস সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমার জনবল সংকট রয়েছে।যেখানে তিন জন সার্জ্জেন্ট ও তিন জন কনস্টেবল প্রয়োজন সেখানে আমি এক জন কনস্টেবল নিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ করছি।অপর দিকে আমি একজন টি আই হয়ে রাস্তায় লাঠি দাঁড়িয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা ও করি।এছাড়াও তিন জন কনস্টেবল ও তিন জন সার্জেন্ট প্রয়োজন বলে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার কে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।