নিজস্ব প্রতিবেদক :
পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন—বাপা আগামী ১৩ই জানুয়ারি শুক্রবার ঢাকার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে কক্সবাজারে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (০৮ জানুয়ারি) বিকালে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেন’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাপার সহ—সভাপতি পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “২৩ বছর ধরে বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে বাপা ও বেন। এতে সফলতাও এসেছে। কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী নদী দখল—দুষণ ও ইসিএ আইন অমান্য করে যারা সমুদ্র সৈকতে দখলদারিত্ব শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত তৈরি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করছে এবং বহু রাস্তাঘাট, সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু দেশের পরিবেশের দ্রুত অবক্ষয় সাধিত হচ্ছে। এই অবক্ষয়ের চিত্র সর্বত্রই দৃশ্যমান। এর প্রধানতম দৃষ্টান্ত হলো দেশের নদ—নদী ও জলাধারের পরিস্থিতি। বহু নদ—নদী শুকিয়ে গেছে এবং দখল হয়ে গেছে। খাল, বিল, পুকুর, দীঘি, হাওর, বাওর হারিয়ে যাচ্ছে, যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা আজ চরমভাবে দূষিত। পরিবেশের এই সামগ্রীক অবক্ষয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিকে ম্লান করে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি চায়।”

এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন—বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল ও পরিবেশ সমাবেশ জাতীয় প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর কবির।

সভায় বক্তারা বলেন, “দেশের বন এবং পাহাড়ের দিকে তাকালেও পরিবেশের প্রকট অবক্ষয় চোখে পড়ে। এমনিতেই বাংলাদেশে বনের পরিমাণ কম। কিন্তু যেটুকু ছিল তাও দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। শিল্পায়ন এবং নগরায়নের কারণে মধুপুর এবং গাজীপুরের শালবন বিলীন হওয়ার পথে। বসতি স্থাপন, বাগান (প্লানটেশন) ও অন্যান্য কৃষির সম্প্রসারণ, বিভিন্ন সরকারী এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বৃহদাকার নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন, ইত্যাদি কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ক্রমশ সংকুচিত ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে এবং পাহাড়ী জনগণের জীবন—জীবিকা—সংস্কৃতি হুমকীর সম্মুখীন হয়েছে। সুন্দরবনের অতি নিকটে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কারণে এই বনও বিপদগ্রস্থ। যানবাহন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কালো ধোঁয়া, নিয়ন্ত্রণবিহীন নির্মাণকাজ, ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ইটের ভাঁটা স্থাপন, ইত্যাদি কারণে শহর এবং গ্রাম উভয় স্থানে বায়ু আজ দূষিত। কঠিন, তরল, এবং বায়বীয় বর্জ্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের সর্বত্র মাটি ও জলাশয়সমূহকে দূষিত করছে এবং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে বন্যার প্রকোপ বাড়ছে, জলাবদ্ধতা বিস্তৃত ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, এবং নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বানিশান্তাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত নদী খননজনিত বালু নিক্ষেপের মাধ্যমে কৃষি জমি ধ্বংস করা হচ্ছে। খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান হারিয়ে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সোচ্চার হতে হবে”।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন—বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সহ—সভাপতি সাংবাদিক এইচ,এম এরশাদ, ফরিদুল আলম শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ,এম নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক শাখার নেতৃবৃন্দ।