রামু প্রতিনিধি:
ভাই-বোনের জমি নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে যদি ভাই-বোনের জমি-জমা আত্মসাৎ করে তখন প্রতিকার পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রামুতে ঘটেছে এমনই অনভিপ্রেত ঘটনা। রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার ও তাঁর ভাই চাকমারকুল দারুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে। পিতার মৃত্যুর ২৫ বছর পরও পৈত্রিক সম্পত্তি পাচ্ছেন না তাদের ভাই-বোনেরা। উল্টো অভিযোগ উঠেছে ভাই-বোনদের বিপুল জমি বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎও করেছেন তারা।

এ নিয়ে চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার ও মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাঁদের বোন হুমাইয়রা সুলতানা সুমি। স্ট্যাটাসটি নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।

স্ট্যাটাসটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো-
“আমি হুমাইরা সুলতানা সুমি। পিতাঃ আমির হামজা সিকদার। মাতা : হাজেরা খাতুন। আমি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে স্বামীর সঙ্গে প্রবাসে আছি। আমার বড় ভাই চাকমারকুল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার এবং আমার সেজ ভাই চাকমারকুল দারুল উলুম মাদ্রাসার বর্তমান মুহতামিম মওলানা সিরাজুল ইসলাম সিকদার তারা দুই জন যোগসাজশে আমার পৈতৃক সম্পদ ৩ একর অর্থাৎ তিনশো শতক মূল্যবান জায়গা বিক্রি করে দেয়। আমার আরো দুই ভাই মুহাম্মদুল হক ৪০শতক এবং অহিদুল ইসলাম ভুট্টো ৪০শতক করে মোট ৮০শতক জমি বিক্রি করে দেয়। মেজ ভাই নুরুল আমিন দখল করে আছে চাকমার কুল মৌজার ৪ একর জমি। ফজলুল ইসলাম সেলিম দখল করে আছে চাকমারকুল মৌজার ২ একর জমি এবং অহিদুল ইসলাম ভুট্টো দখল করে আছে কক্সবাজার বাহারছড়া মৌজার মহামূল্যবান ৩০ শতক অর্থাৎ ১৫ গন্ডা এবং রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের তেচ্ছিপুল মৌজার ৩ একর জমি। আমার বাবা মৃত্যু বরণ করেন ১৯৯৮ সালের ৫ জানুয়ারী। আমির হামজা সিকদারের রেখে যাওয়া ওয়ারিশ হচ্ছে দুই স্ত্রী, ৯ ছেলে এবং ৮ মেয়ে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমাদের পৈতৃক সম্পদ দাবি করলেও তা থেকে বঞ্চিত করা হয়। বড় ভাইদের কুটকৌশল ও হুমকির কারণে ছোট ভাই -বোনেরা অসহায় ও নিরাপত্তাহীন। বড় ভাইদের এমন অপকর্মের প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং সমাজের গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সহযোগিতা কামনা করছি”।

ইতিমধ্যে এ স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজন ও এলাকাবাসী। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামু উপজেলা সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম জানিঢেয়ছেন- একজন ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং অপর ভাই বৃহৎ একটি মাদ্রাসার মুহতামিম হয়ে পিতার মৃত্যুর ২৫ বছর পরও ভাই-বোনদের জমি-জমা ফিরিয়ে না দিয়ে উল্টো আত্মসাৎ করার ঘটনা অনাকাংখিত ও দূঃখজনক। যারা সমাজে সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং ধর্মীয় দৃষ্টিতে ওয়ারিশগণের অধিকার আদায়ে স্বোচ্ছার ভ‚মিকা রাখার কথা তারাই এখন এ ধরনের হীন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের অশনি সংকেত। গ্রাম আদালতের বিচারক ও ধর্মীয় নেতার এমন অবিচার কারো কাম্য হতে পারেনা। নিগৃহিত ভাই-বোনদের পৈত্রিক সম্পদ ফিরিয়ে দিয়ে মানধাধিকার সুসংহত রাখতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা সজাগ ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদারের ছোট ভাই চাকমারকুল দারুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম জানান- সামাজিকভাবে পৈত্রিক সম্পদ ভাগবন্টনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন আছে। এরপরও তারা রাজনৈতিক ও পারিবারিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি জমি-জমা বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন- প্রত্যেক ভাই-বোন পিতার সম্পত্তিতে অধিকার পাবে। আমরা প্রত্যেক ভাই-বোনের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেবো।