হাছান মাহমুদ সুজন,কুতুবদিয়া:

পৃথিবীজুড়ে সর্বত্রই এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া! প্রাচীন যুগের সভ্যতা আর বর্তমান যুগের সভ্যতার সময়কাল বা উন্নয়নের দিক বিবেচনা করলে আমরা অনেক পরিবর্তন দেখতে পায়। আর এসব উন্নয়নশীল পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবাধ অবদান।সভ্যতার এ যুগে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এবার কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় লবণ চাষে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে লবণ উৎপাদনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।তাই দ্বীপজুড়ে মাঠে লবণ উৎপাদন কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার এখন দিন দিন বাড়ছে।এতে আগের চেয়ে লবণ উৎপাদন অনেকটা বৃ্দ্ধি পেয়েছে বলে জানান চাষিরা।

এক সময় উপকূলীয় এই দ্বীপে লবণ চাষীদের খাল ও নালা থেকে পানি উত্তোলনের জন্য প্রাচীন ‘দোলন সেচনি’ বা ‘সেঁউতি’ ব্যবহার ছাড়া বিকল্প কোনো পদ্ধতি ছিলো না। তবে কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা এখন একেবারেই বিলুপ্ত।

প্রাচীন সময়ে লবণ উৎপাদনের জন্য গভীর খাল থেকে পানি সেচের কাজে ব্যবহৃত বাঁশ ও টিনের তৈরি দোলনা সেচনি বা সেঁউতির বদলে বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে সেচ পাম্প এবং ছোট ছোট নলকূপ। লবণ উৎপাদনের জন্য এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে খুবই সহজ পন্থায় পানি উত্তোলন করা যায় বলে মন্তব্য করেছেন চাষীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুতুবদিয়া উপকূলে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫০ টি নলকূপ খনন করা হয়েছে।

বর্তমানে সমগ্র কুতুবদিয়ায় শতকরা ৭০ থেকে ৮০ জন চাষী লবণ উৎপাদনের জন্য যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেচপাম্প এবং লবণ মাঠে খননকৃত নলকূপ থেকে পাম্প মেশিন দ্বারা পানি উত্তোলন করছে। ওই পানিতে রোদের তাপ আর প্রাকৃতিক বাতাস প্রয়োগ করে ফুটানো হয় সাদা লবণ।

উত্তর ধুরুং এলাকার লবণচাষী আমান উল্লাহ ও ফরিদুল আলম বলেন, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লবণ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। তবে আগের যুগের সেই বাঁশ,বেত ও টিনের তৈরী দোলনা সেচনি ব্যবহারের দিন আর নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে লবণ উৎপাদন কাজে পানি সেচের জন্য এখন পাম্প মেশিন ও নলকূপ বসানো হয়। আধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে লবণ চাষাবাদে সময় ও খরচ দু’টি সাশ্রয় হয়।

কৈয়ারবিল এলাকার লবণ চাষী মনির উল্লাহ ও ইমতিয়াজ বলেন, মাত্র ১২০ থেকে ১৬০ ফুট গভীরে গেলে পাওয়া যায় লবণ উৎপাদনের জন্য লবণাক্ত পানি। ছোট ছোট এই নলকূপ খননে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।পাম্প মেশিন দ্বারা নলকূপ থেকে উঠানো লবণাক্ত পানি দিয়ে খুব স্বল্প সময়ে (৩দিনে) লবণ ফুটানো যায়। আর খালের পানি দিয়ে লবণ ফুটাতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ দিন। এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রেও পুরো মৌসুমে ১০০ থেকে ১৫০ মণ লবণের ব্যবধান থাকে।প্রতি সিজনে খালের লবণাক্ত পানিতে ৩’শ মণ লবণ উৎপাদন হলেও নলকূপ থেকে উঠানো লবণাক্ত পানি প্রয়োগ করে সাড়ে ৪’শ মণ লবণ উৎপাদন করা যায় বলে জানান তারা।

লেমশীখালী এলাকার লবণ ব্যবসায়ী কলিম উল্লাহ বলেন, লবণ চাষেও এখন আধুনিক প্রযুক্তির কদর বেড়েছে। স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প পরিশ্রমে লবণ উৎপাদনের জন্য চলতি মৌসুমের শুরুতে মাঠে মাঠে নলকূপ খনন করা হয়েছে। একটি নলকূপের পানি দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ কানি পর্যন্ত লবণ চাষ করা যায়।গত বছর একটু কম খরচ হলেও চলতি মৌসুমে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি কানিতে সিজনজুড়ে পানি উত্তোলন বাবদ খরচ হচ্ছে মাত্র ৮-১০ হাজার টাকা। এতে লবণচাষীরা কঠোর শ্রম থেকেও মুক্তি পাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কুতুবদিয়া কার্যালয়ের লেমশীখালী লবণ প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিদর্শক মোঃ জাকের হোছাইন বলেন,চলতি মৌসুমে কুতুবদিয়ায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে।

প্রায় জমিতে এখন নলকূপের ব্যবহার। সাগরের পানির চেয়ে নলকূপের পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেশি, সেচে খরচও কম এবং স্বল্প সময়ে লবণ ফুটে। তাই পুরো দ্বীপে এখন লবণ চাষে ছোট ছোট নলকূপের ব্যবহার বেড়েছে বলে জানান তিনি।