আনোয়ার হোছাইন, ঈদগাঁও:

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৯ ইট ভাটায় সংরক্ষিত বনের গাছ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে মৌসুমের শুরু থেকে । এতে ধ্বংস হচ্ছে বন ও সামাজিক বনায়ন ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদগাঁওতে চলতি ইটভাটা মৌসুমের শুরু থেকেই স্থানীয় বনবিভাগকে ম্যানেজ করে ইট তৈরীতে পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। কয়লার মূল্য বিগত সময়ের চেয়ে বেশী হওয়ায় কয়লার আড়ালে বনের গাছ পোড়ানোর মহোৎসব শুরু হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইট পোড়ানো মৌসুমের এক মাস পূর্ব থেকেই স্থানীয় ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ, ঈদগাঁও রেঞ্জ ও ফুলছড়ি রেঞ্জকে ম্যানেজ করে চিহ্নিত কাঠ চোর ও বনদস্যুদের মাধ্যমে অবশিষ্ট মহামূল্যবান সংরক্ষিত বন ও সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রাতের আধাঁরে কেটে ঈদগাঁও’র ইটভাটা গুলোর গোপন স্থানে স্তুপ করেছে। পরে প্রয়োজনমত রাতের আধাঁরে ঐ ডিপোগুলো থেকে ইটভাটায় সরবরাহ করে।
এর ফলে বন-পাহাড় ও বনজসম্পদ ধ্বংস হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে।

ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো আইনতঃ নিষিদ্ধ হলেও আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। আর এতে পরোক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু বন কর্মকর্তা ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ঈদগাঁও সদর ইউনিয়নে ৩ টি, ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ৩ টি, চৌফলদন্ডী ইউনিয়নে ১টি ও জালালাবাদ ইউনিয়নের ২টি ইট ভাটায় প্রায় একমাস আগে থেকেই বনজ গাছ পোড়ানো হচ্ছে।
স্থানীয় ও দুরবর্তী বিভিন্ন বন থেকে গাছচোর সিন্ডিকেট এসব গাছ কেটে ইট ভাটায় সরবরাহ করছে।

ঈদগাঁওর সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রামু ও চকরিয়া উপজেলা এবং সুদুর লামা-আলী কদম থেকেও বনজ গাছ এনে এখানকার ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি সরবরাহ করছে গভীর জঙ্গলের পাহাড়ি মাটিও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ প্যারাবন থেকে কেঁওড়া গাছ কেটে কার্গো ট্রলারযোগে ইসলামপুর শিল্প এলাকায় খালাস করছে গাছ চোরেরা। এসব গাছ রাতের আঁধারে সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়।

গাছ পাচারকারী সিন্ডিকেট থেকে গাছ সরবরাহ নিয়ে ভাটা মালিকরা বিভিন্ন গোপন স্থানে এসব কাঠ মজুদ করে রাতের আধারে দ্রুতগামী ডাম্পারযোগে ভাটায় সরবরাহ করছে।

চোরাই এসব বনজ গাছ মজুদ ও সরবরাহ করার সুবিধার্থে বিভিন্ন স্হানে গড়ে তোলা হয়েছে ডজনখানেক অবৈধ ডিপো।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈদগাঁও বাস স্টেশনের পূর্ব পার্শ্বে ১টি, স্টেশনের দক্ষিন পার্শ্বে গরুর বাজার এলাকায় ১ টি, বাস স্টেশনের উত্তর পার্শ্বে ইসলামাবাদ খোদাই বাড়ীতে ২টি, ঈদগাঁও বাজার সংলগ্ন জাগির পাড়ায় ১টি, মেহের ঘোনায় ১টি, জালালাবাবাদ ফরাজী পাড়ায় ১টি ও ইসলামাবাদ বোয়ালখালীতে ২টি ও চৌফলদন্ডীতে ২টিসহ প্রায় ১ ডজন অবৈধ কাঠের ডিপো গড়ে উঠেছে।

এসব ডিপোতে অনুমানিক ৩ হাজার টন চোরাই বনজ গাছ মজুদ করা হয়েছে।
দ্রুতগামী ডাম্পারযোগে রাতের আঁধারে এবং ভোর রাতে এ সব কাঠ সরবরাহ করা হচ্ছে ইট ভাটায়।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ কমকর্তা আনোয়ার হোসেন খাঁন বলেন, বনের গাছ পাচার ও বনজ সম্পদ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কমকর্তা আনোয়ার হোসাইন সরকার বলেন, ঈদগাঁওর ইট ভাটায় গাছ পোড়ানোর বিষয়টি জানা ছিলনা। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।