মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার (৪৮৮৬) কে মন্ত্রীপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রোববার ১১ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উর্ধবতন নিয়োগ-১ অধিশাখার উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত ৬৭০ নম্বর স্মারকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে দেশের সর্বোচ্চ আমলার এ পদে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
কবির বিন আনোয়ার হবেন দেশের ২৩ তম মন্ত্রীপরিষদ সচিব। তিনি বিদায়ী মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এর স্থলাভিষিক্ত হবেন।
অপরদিকে, তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রো বাংলা) এর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) নাজমুল আহসান (৫৯৬৩) কে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে। একইদিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উর্ধবতন নিয়োগ-১ অধিশাখার উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত ৬৭১ নম্বর স্মারকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে এ পদে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নতুন মন্ত্রীপরিষদ সচিবকবির বিন আনোয়ার এর পরিচিতি এবং পারিবারিক জীবন:
কবির বিন আনোয়ার একজন ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভেন্ট। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৭ম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারী সিরাজগঞ্জ জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আনোয়ার হোসেন রতু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হওয়া সত্বেও পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আর্থ সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
কবির বিন আনোয়ার এর মা সৈয়দা ইসাবেলা ছিলেন ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের একজন অন্যতম সংগঠক। তিনি পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা করতেন। সেইসাথে, তিনি রচনা করেছেন ২২টি বই।
কবির বিন আনোয়ার এর মাতামহ সৈয়দা ইসহাক হোসাইন সিরাজী ছিলেন একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি বিখ্যাত বাঙালী লেখক ও কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী এর ভাই। তাঁর পিতামহ আব্দুস সামাদ মিয়া ছিলেন একজন আইনজীবী, তিনি তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। কবির বিন আনোয়ার এর সহধর্মীনি তৌফিকা আহমেদ। তাঁরা ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক ও জননী।
শিক্ষাজীবন এবং সম্পৃক্তি:
কবির বিন আনোয়ার তাঁর স্কুল ও কলেজ জীবন সম্পন্ন করেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি আইন শিক্ষার অভিপ্রায়ে এলএলবি ডিগ্রীও নেন।
স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৭৪ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণী হতে তিনি বয়েজ স্কাউট এর কার্যক্রমের সাথে সরাসরি সংযুক্ত হন। তৎপরবর্তীতে তাঁর শিক্ষা জীবনের সকল স্তরে এবং চাকুরি জীবনের সকল কর্মস্থলে স্কাউটিং তথা নানাবিধ সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত রয়েছেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় স্কাউট সিরাজগঞ্জ এর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক কমিটির আহবায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৮ সাল হতে অদ্যাবধি তিনি বাংলাদেশ স্কাউটের উন্নয়ন বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
কর্মজীবন:
কবির বিন আনোয়ার ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি তার বর্ণিল ও সাফল্যমন্ডিত দীর্ঘ পেশাগত জীবনে একাধারে মাঠ প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন।
মাঠপ্রশাসনের যে সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি কর্মরত ছিলেন তার মধ্যে সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অন্যতম। তাছাড়া তিনি সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, First Secretary হিসেবে বাংলাদেশ এ্যাম্বাসি, হেগ, ন্যাদারল্যান্ডে, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে, উপসচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনি সরকারের সিনিয়র সচিব হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অধিষ্ঠিত আছেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ এবং সম্পৃক্তি:
কবির বিন আনোয়ার নানাবিধ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা, সেমিনার, কর্মশালা ও নোগোসিয়েশন এ অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলন, ওআইসি সম্মেলন, কমনওয়েলথ্ সম্মেলন এ অংশগ্রহণ করেন এবং পবিত্র হজ্জ্ব পালনে সৌদিআরব গমন করেন।
এছাড়াও তিনি ১৭টি দেশে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী সফরে সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন। তিনি সর্বমোট ৪২টি দেশ ভ্রমণ করেন। তার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জাপান, সুইজারল্যান্ড, ভারত, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, অষ্ট্রেলিয়া, ইতালি, বেলজিয়াম, সিরিয়া, ভিয়েতনাম, নেদারল্যান্ড, নেপাল, মালয়েশিয়া, সৌদি-আরব, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুয়েত, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, ডেনমার্ক, রাশিয়া, মরক্কো মালদ্বীপ এবং তুরষ্ক। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Climate Change and Energy:Policymaking for the Long Term’ এ অংশ গ্রহণ করেন।
কবির বিন আনোয়ার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী সমূহের ব্যবস্থাপনা এবং অভিন্ন নদ-নদী বিষয়ক দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। তাঁরই উদ্যোগে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর নেপালের সাথে এবং ১২ বছর পরে ভারতের সাথে যৌথ নদী বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তার ই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি ‘কুশিয়ারা নদীতে ১৫৩ কিউসেক পানি বন্টন সমঝোতা স্মারক’ স্বাক্ষরিত হয়।
পুরষ্কার এবং অর্জন:
তিনি দেশে ও বিদেশে তাঁর জনমূখী কল্যানধর্মী কাজের জন্য বহু পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তিনি ITU থেকে ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ সালে WISIS পুরষ্কার গ্রহণ করেন। এছাড়া ২০১৬ ও ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন পদক এবং ২০১৭ সালে Open Group Award গ্রহণ করেন।
প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ পদক এবং ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তাঁকে সমাজকল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অতীশ দীপঙ্কর শান্তি পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকান্ড:
পেশাগত কর্মক্ষেত্রের বাইরেও তিনি জড়িত আছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে। তার মধ্যে অন্যতম-সভাপতি, বাংলাদেশ এ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশেন, চেয়ারম্যান, জাতীয় সম্পত্তি বিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ স্কাউট, সহসভাপতি, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইয়োগা এসোসিয়েশন, সাধারণ সম্পাদক, ফজলুল হক মুসলিম হল এলামনাই এসোসিয়েশন, ঢাবি, চেয়ারম্যান, পরিচালক, বাংলাদেশ লায়ন ফাউন্ডেশন, মেম্বার, এসডাব্লিউআইডি, বাংলাদেশ, মেম্বার, অদম্য বাংলাদেশ, প্রধান উপদেষ্টা, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা, উপদেষ্টা, মজার স্কুল (পথশিশুদের জন্য পরিচালিত বিদ্যালয়),
তাছাড়া তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সুন্দরবন সংরক্ষণ কমিটি, নদী গবেষণা প্রোগ্রাম এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। প্রকৃতি প্রেমী কবির বিন আনোয়ার তাঁর মায়ের নামে ইসাবেলা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংঠন পরিচালনা করেন। পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে গবেষনা, সামাজিক সেবামূলক কার্যক্রম এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে ইসাবেলা ফাউন্ডেশন প্রায় ৫ বছর ধরে ভূমিকা রেখে আসছে।
প্রকাশনা:
কবির বিন আনোয়ার বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রাম এর চেতনা, অনুভূতি ও সত্ত্বার সাথে গভীরভাবে জড়িত। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে অন্যতম বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-১), বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-২), বিস্মৃত মুসলিম মানস, রুপসী বাংলা (১ম খন্ড), প্রযুক্তি বদলে দিল যারা, অপরুপ বাংলাদেশ (১ম খন্ড)। এছাড়াও তিনি UK Foreign & Commonwealth Office, De-Classified Documents 1962-1971, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and Struggle for Independence এবং US State Department, De-Classified Documents 1953-1973, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and Struggle for Dependence সম্পাদনা করেন।
Abu Siddique
। তিনি ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।