আবদুর রহমান খান

ইরানী নারীদের অধিকারের দাবীতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ তৃতীয় মাসে পদার্পন করেছে। কঠোর হাতে দমন চালিয়েও থামানো যাচ্ছে না বিক্ষোভ।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর আয়েশা আমিনী নামের ২২ বছর বয়সী একজন কুর্দী মহিলা পুলিশ হেফাজরে মারা যাবার পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে সোচ্চার হয় দেশটির নারী-যুবক এবং সরকার সমালোচক গোষ্ঠী। কুরদি সংখ্যালগু অধ্যুষিত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ এখন দেশের অন্য এলাকায় ছড়িয়েছে। রাজপথে বিক্ষোভে নেমে মেয়েরা হিজাব পুড়িয়ে দিচ্ছে, নিজের লম্বা চুল কেটে ফেলছে এবং নৃত্যের তালে সরকার বিরোধী শ্লোগান তুলছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্রী সরকার এ সব বিক্ষোভকে “দাঙ্গা” বলে চিহ্নিত করে শক্ত হাতে দমনের পন্থা নিয়েছে । বিশেষ করে কুর্দিদের এলাকায় মর্টার শেল এবং ড্রোণ দিয়েও হামলা করছে। ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্ক, প্যারিস সহ পশ্চিমা দেশে ছিড়িয়ে পরেছে প্রবাসী ইরানীদের প্রতিবাদ।

ইরান সরকারীভাবে আজ মঙ্গল বার( ২৯ নভেম্বর) জানিয়েছে, আয়েশা আমিনী’র মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত দু’মাসে ৩০০ নাগরিক খুন হয়েছেন। ইরানী বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ এজেন্সি প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ইসলামিক রেভ্যুলেশনারী বাহীনি (আই আর জি সি)’র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমীর আলী জানিয়েছেন, আয়েশা আমিনী’র মৃত্যুতে দেশের সবাই বিচলিত হয়েছে। আর নিহত প্রতিবাদকারীদের মধ্যে রয়েছেন উত্তম নাগরিকেরা। মৃতের তালিকায় সাধারন প্রতিবাদকারি ছাড়াও রয়েছেন পুলিশ এবং আই আর জি সি মিলিশিয়া।

তবে, নরওয়ে ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস গ্রুপ দাবী করেছে দেশটিতে চলমান দমন নিপীড়নে অন্ততঃ ৪১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৫১ জন শিশুও রয়েছে।

ইরানী বিচার বিভাগের সুত্রে জানা গেছে, এসব বিক্ষোভে অংশ নেবার জন্য দু’হাজার নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং ইন্দন যোগানোর দায়ে ৪০ জন বিদেশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে । ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত বিচারে ছ’জনের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর ইরানে মেয়েদের প্রকাশ্যে হিজাব সহ শালীন পোষাক পরিধানের আইন চালু করা হয়। নিশেধাজ্ঞা অমান্য করে অশালীন পোশাকে এবং চুল খোলা অবস্থায় কোনো প্রাপ্ত বয়ষ্ক মহিলাকে রাস্তায় বা পার্কে দেখা গেলে নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ তাদের আটক করছে এবং মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে।

এদিকে, দেশে প্রতিবাদকারী নাগরিকদের ওপর দমন নির্যাতনের প্রতিবাদে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলতে আসা ইরানি টীম জাতীয় সংগীত গাইতে অস্বীকার করে। তবে গত শুক্রবার বিশ্বকাপ ফুটবলে ওয়েলস-এর বিরুদ্ধে ইরানের বিজয় উপলক্ষে দেশটির বিশটি প্রদেশে সম্প্রতি আটককৃত এগার শ’ ব্যাক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ক্রমবর্ধমান গণরোষ কমাতে সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রী সরকার বরাবরই বলে আসছে, তাদের দেশে নানা অজুহাতে অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি এবং ইসরায়েল সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকেই কয়েকটি কুর্দি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সরকারী বাহিনীর সাথে নিয়মিত সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মাধমে বাইরের দেশ থেকে অস্ত্র পাচার করে ইরানে আনা হচ্ছে এবং তারাই নানাভাবে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উস্কে দিচ্ছে।