জে জাহেদ:

কক্সবাজার জেলার বিছিন্ন একটি দ্বীপ মহেশখালী। এ দ্বীপের কুতুবজোমের ঘটিভাঙায় সোনাদিয়া গ্রামের চারশ পরিবারকে পূনর্বাসন করার কর্মযজ্ঞ চলছে। কিন্তু এতেই এলাকাবাসী পড়েছে মহাবিপাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ ঘটিভাঙা গ্রাম সংলগ্ন খালে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে ম্যানগ্রোভ বন উজাড় করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে পূনর্বাসন ভূমি।

অন্যদিকে, গ্রাম সংলগ্ন খাল থেকে কোটি কোটি সেফটি বালু উত্তোলন করায় আশঙ্কা বিলীন হতে পারে ঘটিভাঙা গ্রাম। এতে আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে। দীর্ঘ শত বছরের অধিক সোনাদিয়ার এসব পরিবার বসবাস করছেন। পরিবেশ অধিদফতরের দাবি, প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকায় তাঁদের বসবাস। যেখান থেকে উচ্ছেদ করে ঘটিভাঙার অদূরে পূনর্বাসন করা হবে।

প্রকৃতপক্ষে, যে জায়গাটি নির্বাচন করা হয়েছে সেটির চারপাশে জলবেষ্টিত ও প্যারাবন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বালু উত্তোলনকারীদের দাবি, উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করতেই বালি উত্তোলন করেছেন। এতেই গ্রামবাসী অসন্তুষ্ট। কিন্তু সাধারণ মানুষ বলছেন, এ যেন এক মৃত্যুকূপ থেকে আরেক মৃত্যুকূপে পূনর্বাসন। কেননা, এমনিই সোনাদিয়া সোমালিয়া খ্যাত জলদস্যুর আস্তানা। প্রায় প্রশাসনের অভিযান চলে সেখানে।

পাশাপাশি স্থানীয়রা জানান, একটি প্রভাবশালী মহল ঘটিভাঙ্গা খালের তিনপাশে অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে গ্রামবাসীকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন। যেখানে গ্রাম ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও প্রতিকার পেতে এলাকাবাসী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ঘটিভাঙ্গা গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতারা জানান, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে বালি উত্তোলনে নিষেধ করলেও তারা তা না মেনে দিনরাত বিরামহীনভাবে বালি উত্তোলন করে মাঠ তৈরি করেছেন। ফলে, মানুষের বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে বালি উত্তোলন নীতিমালা অনুযায়ী যন্ত্রচালিত মেশিন দ্বারা ড্রেজিং পদ্ধতিতে নদী বা খালের তলদেশ থেকে বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও জনবসতি, সেতু, কালভার্ট, রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালি উত্তোলন করা সম্পূর্ণ বেআইনি। অথচ এক্ষেত্রে বালুদস্যুরা সরকারি ওই আইন অমান্য করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে খাল থেকে বালি উত্তোলন করেছেন। কিন্তু ঘটিভাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণে ১০০ গজ সীমানা সংলগ্ন খাল থেকে বালি উত্তোলন করায় এলাকাবাসীর আপত্তি থাকলেও নির্বিকার সাব ঠিকাদার।

গ্রামবাসীরা আরো জানান, সরকার যেখানে ‘শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প’ গড়ে দরিদ্রদের গুচ্ছগ্রাম তৈরি করছেন। সেখানে আরেকটি গ্রাম বিলীন হোক তা কখনো চাইবে না।
বরং কিছু অতি উৎসাহী লোক গ্রাম সংলগ্ন ঘটিভাঙ্গা খাল থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে সুবিধা নিচ্ছেন। যাতে সরকারের ভাবমূর্তি বা সুনাম নষ্ট হয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সোনাদিয়া ইউপি মেম্বার মোঃ একরাম মিয়া জানান, দুটি গ্রামের লোকজনকে যদি সরকার পূনর্বাসন করে তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু টেকসই ও উপযুক্ত জায়গায় সোনাদিয়ার মানুষকে পূনর্বাসন করা জরুরী। তাজিয়াকাটা বা ডেম্বনির পাশেও খাস জায়গা রয়েছে। কোন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় আমরা যাব না।

মহেশখালীর ইউএনও মোঃ ইয়াছিন জানান, আমার কাছে এ ধরনের কোন অভিযোগ নেই। যদি গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এলাকার ক্ষতি হয় এমন কিছু হবে না। সেদিকে প্রশাসনের নজর রয়েছে। বিষয়টি আমরা খোঁজ খবর নিয়ে সিদ্বান্ত নিব।

ওদিকে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) সূত্রে জানান, যে জায়গায় মাটি ভরাট করা হচ্ছে ওখানে ফ্রি ট্রেড জোন নয়, বরং সোনাদিয়ার ৪শ’ পরিবারকে পূনর্বাসন করা হবে। যারা সোনাদিয়ায় পরিবেশ প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকায় বসবাস করে জীববৈচিত্রের ক্ষতি করছেন। কারণ সোনাদিয়ায় সরকার ইকো ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তুলবেন।’