রামু প্রতিনিধি:
রামু উপজেলা চেয়ারম্যান কাজলের বিরুদ্ধে ওয়ারিশানদের দোকান ঘর দখলের অপচেষ্টার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চেয়ারম্যান কাজলের জেঠা মরহুম মনির আহমদ চৌধুরীর ওয়ারিশগণ শুক্রবার, ২৯ জুলাই বিকাল ৪ টায় এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মরহুম মনির আহমদ চৌধুরীর পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন- বেদারুল আলম চৌধুরী, ফরিদুল আলম চৌধুরী, হারুনুর রশিদ চৌধুরী, মাহবুব আলম চৌধুরী, খোরশেদ আলম চৌধুরী, কাইছার কামাল চৌধুরী। এছাড়া মরহুম ওয়াহিদুল আলম চৌধুরী ও মরহুম আবছার কামাল চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়- সাবেক রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বড় ভাই মরহুম মনির আহমদ চৌধুরী। রামু চৌমুহনীস্থ সরওয়ার প্লাজা, এইচএম জামান ষ্টোর, জামান হোটেলের পুরো জায়গা মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ও আলহাজ্ব মরহুম মনির আহমদ চৌধুরীর নামে রেজিষ্ট্রিকৃত। বিশেষ করে আর এস ৭৩৩ নং খতিয়ানের উপর সরওয়ার প্লাজা নির্মিত হয়েছে। যা ১৯৪৫ সালে আরএস মালিকের কাছ থেকে মরহুম মনির আহমদ চৌধুরীর নামে রেজিষ্ট্রিকৃত। তাঁদের উভয়ের নামে বিএস ১০১৭ নং খতিয়ান চূড়ান্ত প্রচার আছে। খতিয়ানে তাঁদের আনা অংশ উল্লেখ করা আছে। ১৯৭২ সনে এলআর স্টেটমেন্টেও বিরোধীয় দাগদ্বয়ে তাঁদের নামে অর্ধেক অর্ধেক অংশ লিপি আছে। যাহা উভয় ভ্রাতাদ্বয় মেনে নিয়ে তাঁদের জীবদ্দশায় এবং গত ৮০ বৎসর ধরে ভোগ দখলে ছিলেন এবং আছে।
মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বড় ছেলে সোহেল সরওয়ার কাজল বর্তমানে রামু উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান। ইতিপূর্বে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে আমাদের (মরহুম মনির আহমদের ওয়ারিশ) বিএস ১০১৭নং খতিয়ানের সহ অংশীদারদের নোটিশ প্রদান না করে তৎকালীন ইউএনও সাইদুল হককে দিয়ে একটি ভুল খতিয়ান সৃজন করেন। ওইসময় চেয়ারম্যান কাজল রাত্রীকালীন সৃজিত খতিয়ানমূলে আগ্নেয়াাস্ত্রসহ লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আমাদের এ পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালান। তখন জনতার প্রতিরোধের মুখে লাঠিয়াল বাহিনী সহ পালিয়ে যায়। এ ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সর্বত্র তোলপাড় হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- চেয়ারম্যান কাজল কর্তৃক ভুলভাবে সৃজিত খতিয়ান বাতিলের জন্য মনির আহমদ চৌধুরীর ওয়ারিশগণ নামজারী আপিল মামলা নং ৩২০/১৫ (রামু) দায়ের করেন। মামলাটি এখনো চলমান আছে। বিজ্ঞ আদালত মনির আহমদের ওয়ারিশদের আবেদনে সন্তুষ্ট হয়ে সোহেল সরওয়ার কাজলের জালিয়াতিভাবে সৃজিত বিএস ২২২৪ নং খতিয়ানের উপর স্টে অর্ডার দেন। যাহা অদ্যবধি বলবৎ আছে। এমতাবস্থায় বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবারো সোহেল সরওয়ার কাজল অস্ত্রের মহড়া ও লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে মরহুম মনির আহমদ চৌধুরীর ওয়ারিশদের দোকান ঘর জবর-দখলের পাঁয়তারা শুরু করেছেন।
এমনকি দোকান ঘর সহ জমি জবর দখলের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান কাজল সরওয়ার প্লাজা মার্কেটের সামনে ইট, বালি সহ নির্মাণ সামগ্রী মজুদও করেছেন। মামলায় আদালতের স্টে অর্ডার রামুর ইউএনও’র কাছে গোপন রেখে কথিত পরিমাপের নামে দখলের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মরহুম মনির আহমদ চৌধুরীর ওয়ারিশগণ জবর-দখল চেষ্টার এ ঘটনায় রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন- এ জমি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা বিচারাধিন এবং এ জমিতে স্টে অর্ডার বলবৎ রয়েছে। তাই ভুলভাবে সৃজিত খতিয়ান আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ এ জমি দখলের চেষ্টা করলে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। পাশাপাশি অন্যায়ভাবে জবরদখলের চেষ্টা করা হলে সর্বস্তরের জনগণ তা প্রতিরোধ করতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মরহুম মনির আহমদ চৌধুরীর ওয়ারিশগণ হতাশা প্রকাশ করে বলেন- “যার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ, যার বিরুদ্ধে আমাদের বক্তব্য, তিনি স্বয়ং উপজেলা চেয়ারম্যান কাজল। কোন মানুষ যখন অন্যায় অবিচারের শিকার হন, কোন মানুষ যখন অন্যায়ভাবে কোন জমি থেকে দখলচ্যুত বা হুমকির সম্মুখীন হন, তিনি তখন অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য জনপ্রতিনিধি তথা উপজেলা চেয়াম্যানের কাছে যান। আজ আমরা বড় অসহায়, আমরা কার কাছে যাবো। স্বয়ং উপজেলা চেয়াম্যান তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমাদের জায়গা দখল করতে চান”।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঐতিহ্যবাহি এ পরিবারের অন্যতম সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন- “আমরা বাবারা ২ ভাই যথাক্রমে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ও মরহুম মনির আহমদ চৌধুরী এ জমি কিনে যৌথভাবে ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু রামুর সাবেক ইউএনও সাইদুল হক দায়িত্বপালন কালে একটি ভুল খতিয়ান সৃজন করে এখানে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধের জন্ম দেন। যারা ওই খতিয়ান জালিয়াতি করেছে, তারা আইনের চোখে অপরাধী। বিষয়টি নজরে আসলে আদালত নিশ্চয় এর সুবিচার করবেন। তাছাড়া ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন- তিনি স্টে অর্ডারের বিষয়টি জানেননা। জানলে তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিরত থাকতেন”।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল জানান- কারো জমি দখলের প্রশ্নই আসেনা। আমার পিতা মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী নিজের ক্রয়কৃত ও খতিয়ানভুক্ত ৫ শতক জমি আমাকে হেবা করেন। পরে সেই জমি যথানিয়মে আমার নামে নামজারি হয়েছে। প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগও যৌথভাবে আমার ৫ শতক জমি পরিমাপ করে সীমানা চিহ্নিত করে দিয়েছে। এরপরও এনিয়ে অপপ্রচার ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না।