বাংলানিউজ: কক্সবাজারে ভ্রমণে গিয়ে নয়, গত তিন মাস ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে স্বামী ও শিশুসন্তানসহ অবস্থান করছিলেন ধর্ষণের শিকার নারী। কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দিতে তিনি এ কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, সৈকত এলাকায় গায়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগার জের ধরে ওই নারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের বিষয়টিও সঠিক নয়। মূলত সন্ত্রাসী আশিক গ্রুপ এবং ভিকটিম ছিল পূর্বপরিচিত। দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ধর্ষণের শিকার নারী।

১৮ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার আট মাস বয়সী অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে তারা কক্সবাজার এসেছিলেন। স্বামীসহ তিন মাস ধরে বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করেছেন তারা। তার ৮ মাস বয়সী শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে। সন্তানের চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। টাকা জোগাড় করতে তিনি কক্সবাজার এসেছেন। গত তিন মাস ধরে শহরের অন্তত ৭টি হোটেলে অবস্থান করেছেন তারা।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেন, ওই নারী দেহ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। সন্ত্রাসী আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে কলাতলী এলাকায় সিল্যান্ড নামে একটি গেস্ট হাউসে। আশিক তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এর আগে ওই নারী তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ওই নারীকে বুধবার রাত ৮টার দিকে কলাতলী লাইট হাউস এলাকার একটি কটেজের সামনে থেকে মোটরসাইকেলের পেছনে করে তুলে নিয়ে যান আশিক।

জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, তাকে বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর আশিক তাকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে কলাতলীর জিয়া গেস্ট ইনে নিয়ে যান। তাকে নিয়ে ওই হোটেলের একটি কক্ষে ওঠেন আশিক। তবে সেখানে তাকে ধর্ষণ করার সুযোগ পাননি আশিক। তার আগেই একটি ফোন কলে পুলিশের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে আশিক কক্ষ থেকে চলে যান।

ওই নারী আরও জানান, তিনি হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে আসেন। সেখানে তার স্বামীকে দেখতে পান র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে। র‌্যাব তাকে নিয়ে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনে আসে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ভিকটিম নারী অভিযোগ করেছিলেন, বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তারা বেড়াতে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিনজন।

এরপর তাকে নেওয়া হয় কলাতলীতে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা। পরে র‌্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে।

কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও ভিকটিম এবং মামলার বাদীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি, ওই নারী ও তার স্বামী গত তিন মাস ধরে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে লাইট হাউস এলাকার আরমান কটেজ, একই এলাকার দারুল আল এহসান, সি ল্যান্ডসহ কয়েকটি কটেজে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নারী এবং তার স্বামী কোনোভাবেই পর্যটক নন।

এমনকি তার স্বামীর সঙ্গে ধাক্কা লাগার জের ধরে ঘটনার শুরু বলা হলেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, ভিকটিমকে যখন আশিক মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন তখন তার স্বামী একটি হোটেলে ব্যক্তিগত কাজে অবস্থান করছিলেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার আরও বলেন, মোটরসাইকেলে তুলে মেইন রোড দিয়েই তারা জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে গেছেন, এ সময় ভিকটিক কোনো ধরনের চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি বা আপত্তি জানাননি। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা হোটেলে ওঠেন।

তিনি বলেন, ওই নারী এবং তার স্বামীর দেওয়া তথ্যে অনেক গরমিল রয়েছে, যা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নারী ধর্ষণের এই মামলা তদন্ত করছে। আমরা চাই, এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজার যেহেতু পর্যটননগরী, এখানে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়। শুধু পর্যটক নয়, কিছু কিছু খারাপ লোকজনও এখানে আসে, যারা অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অনেকে দালালির সঙ্গে যুক্ত, কেউ মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই এগুচ্ছি।